কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি
কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি - দেশি মুরগি পালনে সবথেকে লাভ বেশি হয়ে থাকে। তার কারন দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চেয়ে বেশি দাম হয়ে থাকে। এই ছাড়াও এই মুরগির খাবারের খরচ কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সব চেয়ে বেশি হয়ে থাকে দেশি মুরগিতে। দেশী মুরগির বাচ্চার দাম ও তুলনা মূলক কম হয়ে থাকে। দেশি মুরগির আরো অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেইগুলি নিচে দেওয়া হলো। তাই আপনাদের কাছে একটি অনুরুদ কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি এই আর্টিকেলটা শেষ পর্যন্ত দেখুন স্কিপ করবেন না।
![]() |
কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি |
কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি
দেশি মুরগি এবং সোনালী মুরগি পালন লাভ বেশি। তার কারন দেশি মুরগি দাম বেশি হয়ে থাকে এবং দেশি মুরগির খাবারের খরচ কম। দেশি মুরগি বাহিরে ঘুরে তাদের খাবার খেয়ে থাকে বেশির ভাগ সময়।
আমাদের মতে সোনালী মুরগি পালন ও লাভ বেশি। তার কারন সোনালি মুরগি কম মারা যায়, অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে এই সোনালি জাতের মুরগি গুলি। এই ছাড়াও সোনালি মুরগি রোগও কম হয়ে থাকে।
আমাদের দেশের গ্রামের দিকে দেখা যায় বেশির ভাগই ঘরে দেশি মুরগি পালন করে থাকে। এবং দেশির মুরগির পালনে খুব তারাতারি লাভ করা যায়। এই ছাড়াও দেখা যায় অনেকে দেশি মুরগির ডিম বিক্রি করে অনেক টাকায়। এমনিতে আমরা সবাই জানি দেশি মুরগির ডিম অন্যান্য জাতের মুরগির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
যাইহোক একটা দুঃখের বিষয় সেটি গুলো দেশি মুরগির বাচ্চারা বেশি দিন বাঁচতে পারে না। তার জন্য অনেক যত্ন নিতে হয় তাদের। যদি ঠিকমতো যত্ন নেওয়া যায় তাহলে বেঁচে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
দেশি মুরগি থেকে অনেক পরিমাণ ডিম এবং মাংস পাওয়া যায়। দেশি মুরগির ডিম এবং মাংস অন্যান্য মুরগির চেয়ে বেশি স্বাদ হয়ে থাকে এবং প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন ইত্যাদি পাওয়া যায়।
আগেও বলছিলাম দেশি মুরগির পালনের একটি লাভ সেটি হলো দেশি মুরগির খাবারের খরচ অনেক কম। কারন দেশি মুরগি বাহির থেকে তাদের নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে থাকে। তবে আপনি যত বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়াতে পারবেন, যত্ন নিতে পারবেন তত বেশি লাভ। বাজারে দেশের মধ্যে দেশি মুরগির চাহিদা অনেক বেশি।
যাইহোক এইবার আসি ইনকাম এর কথা। আশা করি আপনি বুজতে পেরেছেন দেশি মুরগির কি কি সুবিধা রয়েছে তাহলে এইটাও বুজতে পেরেছেন দেশি মুরগি ঠিক ভাবে পালন করতে পারলে কি পরিমান টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
দেশি মুরগি অনেক দাম হয়ে থেকে এই ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ডিম পাওয়া যায় দেশি মুরগি থেকে। শুধু তাই নয় দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চেয়ে বেশি পরিমাণ বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। তাহলে বুজতে পারতেছেন দেশি মুরগি থেকে কি পরিমান লাভ করা সম্ভব। সবচেয়ে খুশির কথা দেশি মুরগির জন্য আপনাকে বাজারজাত খাদ্য কিনতে হবে না। তবে আপনি যদি একটি ঘরে দেশি মুরগি পালন করেন অর্থাৎ এই ঘর ছাড়া মুরগি অন্য কথায় যাওয়া সম্ভব নয় সেই ক্ষেত্রে আপনার থেকে মুরগির জন খাবার কিনতে হবে।
এইবার আসি সোনালি মুরগি সম্পর্কে। সোনালি মুরগি মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু হয়ে থাকে। এবং দেশি মুরগি মতো সুনালি মুরগিও বেশি পরিমাণ ডিম দিয়ে থাকে। দেশের অনেক খামারি সোনালি মুরগি পালন করে থাকেন। এই মুরগির ডিমের রং বাদামী ক্রীম হয়ে থাকে। সোনালি মুরগির দাম ও অনেক বেশি।
আমাদের মতে দেশি মুরগি এবং সোনালি মুরগি পালন লাভ বেশি। প্রিয় বন্ধুরা আপনাদের মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুণ। দেশি মুরগি এবং সোনালি মুরগি পালন লাভ বেশি এর সাথে আপনারা একমত কিনা। অথবা আপনাদের আশে পাশে কেউ এই জাতের মুরগি পালন করে থাকলে তাদের থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।

অন্যান্য আর্টিকেল পড়ুনঃ
দেশি মুরগি চেনার উপায়
প্রিয় বন্ধুরা দেশি মুরগি অনেক সহজে চেনা যায়। কারন দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চাইতে আলাদা হয়ে থেকে। তবে কিছু কিছু মুরগি আছে দেখতে দেশি মুরগির মতো দেখায় যেমন; সোনালি মুরগি, পাকিস্তানি মুরগি ইত্যাদি।
দেশি মুরগি চেনার সহজ কিছু উপায় রয়েছে সেইগুলি হলোঃ
- দেশি মুরগির ঠোট সমান হয়।
- দেশি মুরগি চোখা ও ধারালো হবে।
- দেশি মুরগি হয়তো একেবারে কালো না লাল হবে না হলে বিভিন্ন রঙের হয়ে থেকে।
- দেশি মুরগি অনেক চঞ্চল এবং ছট ফটে স্বভাবের হবে।
- দেশি মুরগি চেনার সবচেয়ে একটি সহজ উপায় হলো মাথার ঝুটি। এই মাথার ঝুটি খুব গাঢ় লাল হবে। দেশি মুরগির মাথার ঝুঁটি হালকা লাল হয় না।
- দেশি মুরগির পা মসৃণ হয় না।
- পাকিস্তানি মুরগিও অনেকটা দেশি মুরগির মতো হয়ে থাকে।
উপরের এই গুলি হলো দেশি মুরগি চেনার সহজ উপায়। যাইহোক দেশি মুরগি চিনতে কষ্ট হয় না। অনেক সহজে বুজা যায়। দেখলেই বুঝা যায় দেশি মুরগি কোনটা।
সোনালি মুরগি চেনার উপায়
সোনালি মুরগি চেনার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেইগুলি হলোঃ
- সোনালি বর্ণ ধারণ করে যার কারনে সোনালি মুরগি বলা হয়।
- সোনালি মুরগির পালকের রং গাঢ় বাদামি হয়ে থাকে।
- সোনালি মুরগির পায়ের রং হলুদ হয়।
- ছেলেদের ক্ষেত্রে / মোরগের ক্ষেত্রে এদের ওজন প্রায় ৩.২ কেজি হয়ে থাকে। এবং মেয়েদের / মুরগির ক্ষেত্রে এদের ওজন প্রায় ২.২ কেজি হয়ে থাকে।
- ওদের মাথায় লালচে ঝুঁটি হয়।
- এরা দেশি মুরগির মতো ডিম দেই। প্রায় ১৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে সোনালি মুরগি।
- সোনালি মুরগি অনেকটা চঞ্চল।
- এদের স্বভাব/আচার আচরন প্রায় দেশি মুরগির মতো।
উপরের এই লক্ষণ গুলি সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে দেখে থাকবেন।
কোন জাতের মুরগি পালনে লাভ বেশি
![]() |
কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি | কোন জাতের মুরগি পালনে লাভ বেশি |
এইটা নির্ভর করে বাজারের চাহিদা উপর। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মুরগির লাভ হয়ে থাকে। তবে দেশি মুরগির দাম বেশি সেহেতু দেশি মুরগি পালন লাভ বেশি। তবে বাজারে সাদা মুরগির প্রচুর চাহিদা রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে বলা যায় সাদা মুরগির পালনে ও লাভ বেশি।
তবে আপনার থেকে এইটা চিন্তা করতে হবে আপনি যে জাতের মুরগি পালন চান ঐ মুরগির খাদ্য খরচ কত। দুইটি বিষয় আপনার মাথায় থাকলে আপনি যেকোনো জাতের মুরগি পালন করে লাভ করতে পারবেন। সেইগুলি হলো;
- আপনি যেই জাতের মুরগি পালন করতে চান সেই জাতের মুরগির চাহিদা বাজারে কেমন।
- আরেকটি হলো ঐ জাতের মুরগির খাদ্য খরচ কত।
উপরের এই দুইটি বিষয় মাথায় থাকলে ইনশাআল্লাহ আপনি যেকোনো জাতের মুরগি পালন করে লাভ করতে পারবেন।
যাইহোক বন্ধুরা আমরা বলব আপনি দেশি মুরগি পালন করেন এতে অনেক দিয়ে লাফ তার মধ্যে কিছু হলোঃ বেশি বাচ্চা জন্ম দেই, বেশি ডিম দেই, দেশি মুরগির দাম বেশি, খাদ্য খরচ কম, বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে। এবং পাশাপাশি সাদা মুরগি ও সোনালি মুরগি পালন করতে পারেন। তবে সাদা মুরগির খাদ্য খরচ অনেক বেশি।
দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি | দেশি মুরগি পালনে লাভ বেশি
দেশি মুরগি পালন করা তেমন টা কষ্ট নয় তবে কিছু নিয়ম আছে দেশি মুরগি পালন করার যেইগুলো এখন আমরা আলোচনা করব।
- দেশি মুরগি উন্মুক্ত বা সম্পূর্ন খোলা-মেলা পরিবেশে বড় হয়।
- সম্পূর্ন আবদ্ধ অবস্থায়।
- আংশিক আবদ্ধ।
আমাদের দেশে বেশির ভাগই দেখা যায় দেশি মুরগি খোলামেলা ভাবে পালন করা হয়। আর এইভাবেই দেশি মুরগি পালন করলে লাভ বেশি। এতে খাদ্য খরচ অনেক কম হয়। যাই হোক দুঃখের বিষয় হলো কমার্শিয়াল অথবা ব্যাবসায়িক ভাবে দেশি মুরগি পালন করলে তেমন লাভজনক হয় না। অর্থাৎ বন্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন করলে লাভ করা অনেক কষ্ট।
তবে আপনি চাইলে বন্ধ অবস্থায় পালন করতে পারেন সেইক্ষেত্রে আপনার খাদ্য খরচ হবে প্রচুর। যাইহোক সব দিক দিয়ে দেশি মুরগি পালনের লাভ প্রচুর।
আপনি যেই ঘরে দেশী মুরগী পালনে করবেন সেই ঘর হতে হবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা। এবং এই ঘরের প্রস্থ সাধারনত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট বা চাহিদা অনুযায়ী করা যেতে পারে।
দেশি মুরগির ঘরের মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচু। এই ছাড়াও দেশি মুরগির ঘরের চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। এবং সবসময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বাহিরহতে কোন কিছু যেন শেডে প্রবেশ করতে না পারে।
বন্ধুরা দেশি মুরগি পালন করে লাভ করতে চাইলে প্রথম একমাস পর্যন্ত ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে দেশি মুরগির। এই ছাড়াও দেশি মুরগিকে একদম বাহিরে ছাড়া যাবেনা। সকল প্রকার শিকারি প্রানী বিশেষ করে কাক-শকুন, বিড়াল, বেজি ইত্যাদি থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়?
একটি দেশি মুরগি সাধারনত ১৬৮ থেকে ১৮০ দিনে প্রথম ডিম পাড়ে। তাহলে বুজতে পেরেছেন প্রায় ৬ মাস পর বা ৬ মাস বয়সি একটি মুরগি প্রথম ডিম দেই। তবে উন্নত জাতের একটি দেশি মুরগি সাধারনত ১৪৮ থেকে ১৫২ দিনের মধ্যে প্রথম ডিম দেই।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে একটি দেশি মুরগি প্রতিবছর ৫০ থেকে ২০০টি ডিম দেই। তবে উন্নত দেশি মুরগির ক্ষেত্রে ডিম বেশি পাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর একটি দেশি মুরগির ডিমের ওজন ৫০ গ্রাম মতো হয়ে থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা। এই ছাড়াও একটি দেশি মুরগির ওজন বেশির ভাগই সময় ২০০ থেকে ৯০০ গ্রাম হয়ে থেকে।
দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা
বন্ধুরা দেশি মুরগি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর থেকে আপনাকে নিয়মিত ২ মাস পর্যন্ত কিছু ওষধ খাওয়াতে হয়। এর পর অর্থাৎ ৫৫-৬০ দিন / যখন মুরগির বয়স ৫৫-৬০ দিন হবে তখন থেকে নিয়মিত প্রোবায়োটিক + ভিটামিন + লিভারটনিক খাওয়া তে হবে।
যাইহোক বন্ধুরা এখন দেখে নিন ১ থেকে ৫০ দিন পর্যন্ত দেশি মুরগির ঔষধের তালিকাঃ
- ১ দিন → লাইসোভিট / গ্লুকোজ।
- ২ - ৪ দিন → টানা এমক্সাসিলিন।
- ৩ - ৫ দিন → আইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস)।
- ১০ - ১২ দিন → গামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন।
- ১২ - ১৪ দিন → লিভারটনিক ও ভিটামিন।
- ১৮ - ২২ দিন → গামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন।
- ২৪ - ২৬ দিন → এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত)।
- ২৪ - ২৬ দিন → এম্প্রোলিয়াম + সিপ্রো।
- ৩০ দিন → ফাউলপক্স ভ্যাক্সিন।
- ৩৫ দিন → কৃমিনাষক ঔষধ।
- ৪৫ - ৪৮ দিন → রানীক্ষেত লাইভ ভ্যাক্সিন (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)
- ৫০ থেকে নিয়মিত → প্রোবায়োটিক + ভিটামিন + লিভারটনিক খাওয়াবেন।
সতর্কঃ বন্ধুরা দেশি মুরগিকে বা যেকোনো মুরগিকে ঔষধ গুলি খাওয়াতে আমরা বলি না। শুধু মাত্র আপনাদের সাথে দেশি মুরগির ঔষধের পরিচয় করে দেওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেল। বন্ধুরা মুরগিকে ঔষধ গুলি খাওয়ানো আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। না হলে অনেক ক্ষতি হতে পারে মুরগির তার জন্য আমরা দায়ী থাকব না।
দেশী মুরগীর খাদ্য তালিকা | deshi murgir khabar
দেশি মুরগি পালন করে লাভ করতে চাইলে খাদ্য খরচ অব্যশই কম করতে হবে। যাইহোক দেশি মুরগিকে দানাদার জাতীয় খাদ্য দিতে হবে অব্যশই বাজারে প্রাপ্ত সোনালী ফিডের সাথে মিশিয়ে দিবেন এতে ভালো হবে।
তবে দেশি মুরগিকে বাহিরে ঘুরতে দিলে এতে লাভ বেশি হয়। কারন মুরগি নিজে বাহিরের ঘাস, শাক-সবজি ও লতাপাতা খেয়ে থাকে। তাই মাঝের মধ্যে ঘুরতে দেওয়া উচিত। খাদ্য হিসেবে ধান, চালের খুদ, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, বিভিন্ন ডাল ও শষ্যদানা দেওয়া যাবে। শুধু ফীড খাবলে দেশি মুরগি থেকে লাভ করা যাবে না।
অভিযোগঃ কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য দেওয়া থাকলে অথবা কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।