একুশে বইমেলা রচনা | Ekushey Boi Mela
একুশে বইমেলা রচনা | Ekushey Boi Mela - আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি ( বই মেলা রচনা সম্পর্কে )। আমরা খুব সহজ ভাষায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমার দেখা একটি বইমেলা রচনাটি। বইমেলা রচনা pdf | বই মেলা রচনা class 6 | কলকাতা বইমেলা রচনা | একুশে বৌ মেলা | বই মেলা রচনা class 10 | বইমেলা রচনা class 3 | বই মেলা রচনা class 7 | বইমেলা রচনা class 4 | বইমেলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।
![]() |
একুশে বইমেলা রচনা | Ekushey Boi Mela |
একুশে বইমেলা রচনা | Ekushey Boi Mela | আমার দেখা একটি বইমেলা রচনা | কলকাতা বইমেলা রচনা
ভূমিকাঃ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মেলা। আর বাঙালি সত্তার মর্মমূলে গেঁথে থাকা মহান একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিকে লালনকারী একুশের বইমেলা বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধেরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মেলা নামে চিহ্নিত হলেও বইমেলা অন্য সব মেলার মত নয়। এটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও গৌরবকে সমান্তরাল করেছে। এ মেলা আমাদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় সন্ধানে অনুপ্রাণিত করে। সে জন্যই প্রতিবছর এদেশের মানুষ ফেব্রুয়ারি মাসে একুশের বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
বইমেলার ইতিবৃত্ত
বইমেলার ইতিবৃত্তঃ বইমেলার মাধ্যমে পুস্তক প্রদর্শনীর ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রাচীন গ্রিসে তৎকালীন দার্শনিক চিন্তাবিদদের রচনা বিদ্যোৎসাহী মহলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল। তবে ইউরোপের লিপজিগ শহরে সর্বপ্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। আধুনিককালে যে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মহাসমারোহে বইমেলার আয়োজন হয়ে থাকে তার সূচনা ১৪৬২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট নামক শহরে। এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বইমেলা বসে ফ্রাঙ্কফুটেই। তাছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত শহরেই বিভিন্ন সময় ও মেয়াদে বইমেলা আয়োজিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে বইমেলার সূচনা
বাংলাদেশে বইমেলার সূচনাঃ বইমেলার আয়োজন এক ধরনের সংস্কৃতি। আর বাংলাদেশে বইমেলা সংস্কৃতির সূচনা পাকিস্তান আমলে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের যে সাংস্কৃতিক ও স্বকীয় চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল তা হোঁচট খায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টার প্রতিবাদে ও বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির শোকাবহ ঘটনার মধ্যদিয়ে বাংলার মানুষ মাতৃভাষার প্রতি তাদের আত্মত্যাগের অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করে। একুশের অবিনাশী চেতনার হাত ধরেই মাতৃভাষা ও সাহিত্যচর্চার এক নবযুগের সৃষ্টি হয়। এই নবচেতনার পটভূমিতেই বইমেলার সূচনা হয়। ১৯৭১ সাল থেকে বাংলা একাডেমী মহান একুশে উপলক্ষে হ্রাসকৃত মূল্যে তাদের প্রকাশিত বই বিক্রি শুরু করে। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে তাদের নিজস্ব বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সর্বপ্রথম বাংলা একাডেমীকেন্দ্রিক একুশের বইমেলার উদ্যোগ সূচিত হয় সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার উদ্যোগে ১৯৭৫ সালে। সে বছর মুক্তধারা অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে বাংলা একাডেমীর অনুমতিক্রমে খোলা আকাশের নিচে বাংলা একাডেমী গেটে বই প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে। এতে এক ধরনের উৎসাহ- উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
একুশের বইমেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা
একুশের বইমেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রাঃ মুক্তধারা আয়োজিত পুস্তক প্রদর্শনী জনগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাড়া জাগায়। এরই দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৫ সালে আহমদ পাবলিশিং হাউস ও ১৯৭৭ সালে নওরোজ কিতাবিস্তান ও চলন্তিকা বইঘর নামক প্রকাশনা সংস্থা বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে উপলক্ষে একাডেমী প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলার আয়োজন করে। তবে পূর্ণাঙ্গ বইমেলার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। বাংলা একাডেমী বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় এ বছর থেকে নিয়মিত বইমেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে আসছে। ১৯৮৫ সালে এ মেলার নামকরণ করা হয় 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'।
বইমেলার সম্প্রসারণ
বইমেলার সম্প্রসারণঃ সেই সূচনাকাল থেকে যতই দিন গড়িয়েছে বইমেলাও ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। ১৯৮০ সালে একুশের বইমেলায় স্টলের সংখ্যা ছিল মাত্র ত্রিশটির মত আর ২০০০ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় নয়শ'র কাছাকাছি। মাঝে কিছুদিন বইমেলাকে কেন্দ্র করে মেলার ভেতরে ও বাংলা একাডেমীর কাছাকাছি এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কুটির শিল্পসহ অন্যান্য পণ্যের রীতিমত মেলা বসত। বর্তমানে বইমেলায় অন্য কোন পণ্যের বেচাকেনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জাতীয় জীবনে একুশে বইমেলার প্রভাব
জাতীয় জীবনে একুশে বইমেলার প্রভাবঃ জাতীয় জীবনে জাতীয়তাবোধের চেতনা জাগরণে একুশের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সূচিত স্বাজাত্যবোধ, মাতৃভাষাপ্রীতি ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের চেতনা বইমেলাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে প্রাণ লাভ করে থাকে। বই কেনার ও পাঠের অভ্যাস গঠনে বইমেলার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ জাতীয় জীবনে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ও মননশীলতার পরিচর্যায় বইমেলার অবদান সর্বাগ্রে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে মহান ভাষা শহীদদের স্মরণ করে বাঙালি জাতি আত্মবিনির্মাণের শপথ গ্রহণ করে।
একুশের বইমেলার গুরুত্ব
একুশের বইমেলার গুরুত্বঃ অমর একুশের বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মেলার কতিপয় ইতিবাচক দিক বা গুরুত্ব নিম্নে চিহ্নিত করা হলঃ
১. জ্ঞানের বিকাশ সাধনঃ বই জ্ঞানের চিরন্তন উৎস। কিন্তু আমাদের দেশে বই পড়া ও কেনার অভ্যাস খুবই কম। একুশের বইমেলার সুবাদে মানুষের মধ্যে বই পড়া ও কেনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বইয়ের সংস্পর্শে এসে মানুষের মন জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় উৎকর্ষমণ্ডিত হয়ে ওঠে।
২. লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের সম্মিলনঃ লেখক বাদ দিয়ে প্রকাশকের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। আবার পাঠক ছাড়া লেখক ও প্রকাশক অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন। একুশের বইমেলায় প্রকাশক বইয়ের সাজি নিয়ে হাজির হন। সেখানে লেখকরা হাজির হন সশরীরে। উৎসবমুখর পরিবেশে একুশের বইমেলা লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মাঝে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে।
৩. বাণিজ্যিক সাফল্যঃ সাধারণভাবে আমাদের দেশে সৃজনশীল বইয়ের পাঠক খুবই নগণ্য। সেজন্য প্রকাশকদের যে কোন বই প্রকাশের সময় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি নিতে হয়। একুশের বইমেলার সময় মানুষ উৎসবের আমেজে বই ক্রয় করে। সারা বছরের ব্যবসায়িক ব্যর্থতা এ সময় প্রকাশকরা কাটিয়ে ওঠেন। প্রকাশনা ব্যবসার ক্ষেত্রে বইমেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. নগরবাসীর বিনোদনঃ আমাদের নাগরিক জীবন শত সমস্যার কণ্টকে ক্ষত-বিক্ষত। যান্ত্রিক জীবনের ঘানি টানতে টানতে মানুষ যখন হাপিয়ে ওঠে তখন একুশের বইমেলা অনেক মানুষের জন্যই বয়ে আনে নির্মল বিনোদনের আমেজ। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ঢাকার নগরবাসী বইমেলার উৎসবে যোগদান করে। পুস্তকের সংস্পর্শে এসে এক মননশীল আবহে মানুষ লাভ করে নির্ভেজাল বিনোদনের আস্বাদ। তাই সুস্থ বিনোদনের ক্ষেত্রে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশঃ বাঙালি সংস্কৃতির লালন ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে একুশের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ মেলায় যোগদান করে এবং নিজেদের অখণ্ড জাতিসত্তার পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হয়।

উপসংহার
উপসংহারঃ অমর একুশের বইমেলা জাতির মনন ও কৃষ্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একুশের বইমেলা বাঙালির সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তাবোধের চেতনায় উজ্জ্বল মিলন-মেলা। প্রতিবছর এ মেলাকে ঘিরে আগ্রহ ও জনসমাগম বৃদ্ধি পায়। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে এ মেলাকে অন্য কোন বৃহৎ স্থানে স্থানান্তরিত করলে ভাল হয়।
অন্যান্য আর্টিকেল দেখুন !!
( একুশে বইমেলা রচনা ) এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে এবং ( ekushey boi mela ) এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।