একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | Ekushe February Rachana
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনাটি আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। Ekushe February Rachana এই আর্টিকেলে দুই ভাবে দেওয়া হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি রচনাটি। আশা করি আপনাকে জন্য অনেক সহজ হবে এই রচনাটি। যারা গুগলে সার্চ করেন একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস ৪, একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ৫০০ শব্দ, ভাষা শহীদ রচনা, একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস ৩, একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ১০০ শব্দ, একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ৩০০ শব্দ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট, ইত্যাদি লিখে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটা।
![]() |
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | Ekushe February Rachana |
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | Ekushe February Rachana | একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস ৫,৬,৭,৮,৯,১০
ভূমিকাঃ বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে যে কয়টা দিন সূর্যের মত চির জাজ্বল্যমান, এর মধ্যে অন্যতম একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলার মানুষের শ্রেষ্ঠ অর্জনও এ দিনটিই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল একটা দিন নয়, এটা আমাদের জন্য গর্বের অনুষঙ্গ, আমাদের সম্মানের ধন। একুশকে নিয়ে আমরা আজ বিশ্বের বুকে আত্মপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছি, অর্জন করেছি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমীহ এবং স্বীকৃতি। একুশকে সঙ্গী করেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রত্যয়ে আত্মদানে অনুপ্রাণিত হই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির রয়েছে বহুমাত্রিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
আরো পড়ুনঃ ফেনী জেলা কেন বিখ্যাত?
একুশের পটভূমি
একুশের পটভূমিঃ ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজরা শাসন থাবা গুটিয়ে নেয়। এর আগেই ভারতবর্ষের রাজনীতিবিদরা দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একমত হন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস বলে বাংলাদেশকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দেশের পরিচয় হয় পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে প্রায় দেড় হাজার মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও অভিন্ন রাষ্ট্র গঠন ছিল একটি অযৌক্তিক প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র কায়েমের সাথে সাথে এর সমস্ত ক্ষমতা ও অধিকারের নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়ায় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক সঙ্গতিতে এদেশ শ্রেয়তর অবস্থানে থাকলেও শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর সুবিচার করে নি। উপরন্তু নানারূপ বৈষম্যনীতি চাপিয়ে দেওয়া হয় এ দেশের ওপর। এই বৈষম্যেরই ক্ষেত্রটি সম্প্রসারিত হয় ভাষা পর্যন্ত। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের বহুভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় না নিয়ে, বিশেষ করে ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৬ ভাগ মানুষের ভাষা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয় শাসকগোষ্ঠী।
একুশ হল সৃষ্টি
একুশ হল সৃষ্টিঃ রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগের সাথে সাথে বাঙালি জাতি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সোচ্চার হয়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করল না। উপরন্তু পাকিস্তানের স্থপতি মুহম্মদ আলী জিন্নাহ এ দেশে এসে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এদেশের ছাত্র-জনতা পেশাজীবী বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। ঢাকা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে দাঁড়াল প্রতিবাদের অগ্নিভূমি। আন্দোলনের তীব্রতার পটভূমিতে বেসামাল শাসকচক্র ১৪৪ ধারা জারি করে প্রতিবাদের ভাষা অবরুদ্ধ করতে চাইল। কিন্তু বাঙালির ভাষাপ্রেম তখন জীবনের মায়াকেও অতিক্রম করেছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমবেত হল সমুদ্রগভীর জনতা। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে জনতা মিছিল শুরু করে। পুলিশ সে মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালালে রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে শাহাদাত বরণ করলেন। শহীদের আত্মদানে বাংলার মানুষ রচনা করল ভাষাপ্রেমের এক অমলিন ইতিহাস। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি জাতির জন্য হয়ে উঠল এক উজ্জ্বলতম দিন।
একুশে ফেব্রুয়ারির বিশ্বষীকৃতি
একুশে ফেব্রুয়ারির বিশ্বষীকৃতিঃ বিশ্বের বুকে একমাত্র বাঙালি জাতিই মাতৃভাষার জন্য আত্মবিসর্জনের এক বিস্ময়কর ইতিহাস রচয়িতা। জাতির এ গর্বিত প্রাপ্তিটি অবশেষে বিশ্বসম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেল ২০০০ সালে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে জাতিসংঘ এ দিনটিকে ঘোষণা করল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এখন প্রতিবছর সারা বিশ্ব দিবসটি ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে উদ্যাপন করে এবং বাঙালির আত্মদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা
জাতীয় জীবনে একুশের চেতনাঃ একুশ মানে হার না মানা, একুশ মানে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। একুশের চেতনা চির উজ্জ্বল, চির অমর। কবি শামসুর রাহমান গর্বভরে তাই উচ্চারণ করেছেন—
আরো পড়ুনঃ আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা।
“শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ,
স্মৃতির-গল্পে ভরপুর,
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।"
বস্তুত একুশের মাধ্যমে জাতি শিখেছে দ্বিধাহীন চিত্তে আত্মদান করতে। এটি একটি দিবস কেবল নয়, জাতির জন্য রক্তপথের সূচনাকারী এক অমলিন অধ্যায়। অপশক্তিকে বুকের রক্তে মুছে দিতে একুশ গোটা জাতিকে প্রতিমুহূর্তে উজ্জীবিত করে চলেছে। একুশের রক্ত বাংলা ভাষাকে শেষ পর্যন্ত সাংবিধানিক ভাষার সম্মান এনে দেয়। শাসকচক্র সরে আসে তাদের অশুভ অবস্থান থেকে। এই অর্জন জাতিকে আরও বৃহত্তর অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে তুলল।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা।
একুশের চেতনা আসলে অবিনাশী। শুধু আজ নয়, আগামী দিনেও জাতি তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় একুশের কাছ থেকেই শক্তি এবং প্রেরণা ধার করে দৃপ্ত পদভারে এগিয়ে যাবে। একুশই আমাদের চিনিয়েছে অখণ্ড জাতিসত্তার পথ, স্বাতন্ত্র্য, ও স্বকীয়তার পরিচয়। ভাষা আন্দোলন বা একুশ জাতীয়তাবোধের যে চেতনা সৃষ্টি করেছে তার বিনাশ সাধন করার শক্তি কারো নেই । প্রাণে প্রাণে সবারই বাজে --
"একুশ ভাষার প্রাণ
একুশ করেছে দান
একুশ মোদের পাথেয়
একুশ করো নাকো হেয়। "
একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা
একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাঃ বাংলার মানুষ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর নিজেদের পরিচয় নতুন করে অর্জন করল। জাতি বুঝতে পারল আত্মদানের মাধ্যমে সবকিছুই অর্জন সম্ভব। গোটা জাতি তখনই পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভের আশায় মরিয়া হয়ে উঠল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার জন্য জাতি সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারের প্রত্যয়ে '৬২, '৬৬ পেরিয়ে '৬৯-এ এসে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত নাড়িয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গোটা জাতি আত্মনির্মাণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে ভোট দিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করল না। উপরন্তু বাংলার মানুষের স্বাধিকার চেতনাকে অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে শাসকচক্র এদেশের বুকে লেলিয়ে দিল রক্তপিপাসু হায়েনার দল। '৫২ সালে রক্তদান করতে শেখা বাঙালি জাতি ধ্বংসলীলার মধ্যেই ইস্পাত-কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলল। দীর্ঘ নয় মাস ধরে অসম যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি অকাতরে জীবন দিলে হানাদার বাহিনীর পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব হল না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ লাভ করল স্বপ্নের স্বাধীনতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলটি একুশের চেতনাতেই প্রোথিত।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা।
একুশ আমাদের পাথেয়
একুশ আমাদের পাথেয়ঃ একুশের চেতনা আমাদের বর্তমানের শক্তি, ভবিষ্যতের পাথেয়। স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্যদিয়ে অর্থবহ করে তোলার জন্য আমাদের এখন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে আমাদের স্বকীয় সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে একুশের ভাষা শহীদদের আত্মদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্যই। সালাম-বরকত-রফিকেরা জীবন দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার জন্য, আমাদের সার্বভৌম সত্তার অবিকৃত রূপটি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। আগামী দিনে আমাদের উচিত হবে তাঁদের আত্মদানের চেতনাকে লালন করা ও সমুন্নত রাখা।
উপসংহার
উপসংহারঃ একুশের মহান চেতনাকে সমুন্নত রেখেই বাঙালি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ১৯৫২ সালে যে স্বাধিকার চেতনার জন্ম হয়েছিল তা কোনদিনই মলিন হবার নয়। আর এ চেতনা মলিন হলে জাতি হিসেবে আমরা অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে হারিয়ে যাব। শামসুর রাহমানের প্রদীপ্ত উচ্চারণ-

আরো পড়ুনঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা।
'তোমাকে উপড়ে নিলে,
বলো তবে কী থাকে আমার?
উনিশ শো বাহান্নোর দারুণ
রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি বুকে নিয়ে
আছো সগৌরবে মহীয়সী।”
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে এবং Ekushe February Rachana এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।