একটি ঝড়ের রাত রচনা | Ekti Jhorer Rat Rochona

একটি ঝড়ের রাত রচনা - আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি Ekti Jhorer Rat Rochona, কালবৈশাখী রাত, আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা, মুহূর্ত সম্পর্কে। খুব সহজ ভাবে কালবৈশাখী রাত রচনা সম্পর্কে দেওয়া হয়েছে। আশা করি আপনাদের একটি ঝড়ের রাত রচনাটি ভালো লাগবে। একটি ঝড়ের রাত রচনা class 6,7,8,9,10। একটি ঝড় বৃষ্টি দিনের অভিজ্ঞতা।

একটি ঝড়ের রাত রচনা | Ekti Jhorer Rat Rochona
একটি ঝড়ের রাত রচনা | Ekti Jhorer Rat Rochona

একটি ঝড়ের রাত রচনা | Ekti Jhorer Rat Rochona | কালবৈশাখী রাত | আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা, মুহূর্ত

ভূমিকাঃ দিন আসে দিন যায়। জীবন প্রবাহে ঘটে নানা ঘটনা। প্রতিনিয়ত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় এ সকল ঘটনা। কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা মানুষের জীবনে স্মৃতিময় হয়ে থাকে। আমার জীবনের তেমনি স্মৃতিময় ঘটনা ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের কাল রাত। এটি ছিল একটি ঝড়ের রাত। জীবনে অনেক ঝড়ের কথাই শুনেছি। কিন্তু সে রাতে ঝড়ের যে তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছি, এর কোন তুলনা হয় না।

স্মরণীয় রজনী ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল

স্মরণীয় রজনী ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলঃ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং প্লাবনের দেশ বাংলাদেশ। এর ফলে প্রতিবছরই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের বুক-ধ্বংস হচ্ছে ধন-প্রাণ সবকিছু। এমনই একটি চরম দুঃখের রজনী ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। এটি আমার তথা জাতীয় জীবনের একটি বেদনার ইতিহাস, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার রক্তাক্ত হৃদয়ের আহাজারি। এদিন উপকূলীয় অঞ্চলের হাতিয়া, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, চরজব্বার এবং নোয়াখালীর সমুদ্র অঞ্চল প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।

ঝড়ের পূর্বাভাস

ঝড়ের পূর্বাভাসঃ কিছুদিন যাবৎ আবহাওয়ায় দেখা দিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কখনো আকাশ মেঘে ঢাকা, কখনো প্রবল বৃষ্টি। ২৭ এপ্রিল-আবহাওয়া দফতরের নজরে এল ঝড়ের পূর্বাভাস। রেডিও, টিভি থেকে ঘোষণা করা হলো বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমে তা উত্তরে সরে যাচ্ছে এবং প্রবল ঝড়ের রূপ নিচ্ছে। ২৮ তারিখে তা আরো প্রবল রূপ ধারণ করল। বেতারের ইথারে ভেসে এল মহাবিপদ সংকেত-১০ নম্বর সিগন্যাল, সবাই সাবধান!

সেই মহাঝড়

সেই মহাঝড়ঃ ২৯ তারিখ সকাল থেকেই শুরু হল একটানা বর্ষণ। দিন শেষে এল রাত। মানুষের সামনে এসে দাঁড়াল মহাদুর্যোগ। রাতের প্রথম প্রহরে শুরু হল। নির্মম, নিষ্ঠুর প্রচণ্ড ঝড়। দৈত্যের মতই তার মরণ ছোবল। যতই রাত বাড়ছে ততই বাড়ছে ঝড়ের গতিবেগ। রাত দশটায় শুরু হল মহাপ্রলয়ের মহানৃত্য।

ক্রমে রাতের প্রথম প্রহর গড়িয়ে এল মাঝরাত। শুরু হল কেয়ামতের আলামত। বাতাসের গতিবেগ গিয়ে দাঁড়াল ২৫০ কিলোমিটারে। চারদিকে কানফাটা বজ্রধ্বনি, আগুনের বৃষ্টি, শো-শো শব্দ-যেন মহাপ্রলয়ের শিঙ্গাধ্বনি। তার সাথে ২০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। ঘরে ঘরে মানুষের মরণ চিৎকার। রাক্ষসী ঝড়ের হুঙ্কারে পৃথিবী প্রকম্পিত। কাঁচা ঘর-বাড়ি এবং গাছপালা বিকট শব্দ করে ভেঙ্গে যাচ্ছে। আকাশ ব্যাপী বিদ্যুতের চমক এবং মেঘের গর্জনে ধরণী খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার উপক্রম। সমগ্র প্রকৃতি ধ্বংসের আনন্দে মত্ত। ভয় ব্যাকুল পৃথিবী তারই পদতলে ত্রাহি ত্রাহি চিৎকারে দিশেহারা।

ঝড়ের এক পর্যায়ে আমরা

ঝড়ের এক পর্যায়ে আমরাঃ হঠাৎ ঝড়ের একটি ঝাপটা এসে আমাদের ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। মা-বাবা, ভাই-বোন আমরা সবাই ভয়ে দিশেহারা হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম আমাদের ঘরের ভেতর পানি ঢুকেছে। দেখতে দেখতে পানি হাঁটু পরিমাণ হয়ে গেল। চারদিক ঘোর অন্ধকার। বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তবুও প্রাণটাকে বাঁচাবার জন্য সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। ঝড়ের সাথে লড়ে এবং পানি সাঁতরিয়ে আমরা পাশের একটা বাসার দোতলায় আশ্রয় নিলাম। সেখানে আমাদের মত আরও অনেক লোক আশ্রয় নিয়েছে।

ঝড়ের পর

ঝড়ের পরঃ শেষ রাতের দিকে ঝড়ের বেগ আস্তে আস্তে কমে এল। ভোর হলে আমরা নিচে নেমে এলাম। চারদিক ধ্বংসস্তূপের ওপর সীমাহীন বিরান ভূমি। নিষ্ঠুর ঝড় কেড়ে নিয়েছে সব। মাঝে মাঝে দু'একটি অর্ধধ্বংস দালান এবং ডালপালাহীন বৃক্ষ পূর্বের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। যত্রতত্র মানুষ আর গবাধি পশুর লাশ পড়ে রয়েছে। তাদেরকে সরানোর মত কোন লোক দেখা গেল না। গাছের মগডালেও মৃত দেহ আটকে থাকতে দেখলাম। মানুষ আর পশু পাখির চিৎকারে পৃথিবী প্রকম্পিত। স্বজন হারা মানুষ আপন জনের খোঁজে চারদিকে ছুটাছুটি করছে।

উপসংহার

উপসংহারঃ জানতাম ঝড় তুফান ভয়ঙ্কর। কিন্তু সে যে নিমিষে সর্বহারা করতে পারে, তা এবারই প্রথম উপলব্ধি করলাম। ভাবতাম মৃত্যুর রূপ না জানি কেমন। ঝড়ের সে রাতে চোখের সামনে মৃত্যুর রূপ প্রত্যক্ষ করলাম। সে রাতের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে, হৃদয়ে বাজে ব্যথা। এ রাতের কথা আমি কোন দিন ভুলব না-ভুলার নয়।


জনপ্রিয় আর্টিকেল গুলি পড়ুন!

( একটি ঝড়ের রাত রচনা ) এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য দেওয়া থাকলে এবং Ekti Jhorer Rat Rochona এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ