একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা | Ekti Borshon Mukhor Shondha
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা এই রচনাটি দেখে নিন এইখানে থেকে। আমরা এই আর্টিকেলে অনেক সহজ উপায়ে এবং দুই ভাবে Ekti Borshon Mukhor Shondha এই রচনাটি আলোচনা করেছি। এই রচনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি রচনা।
![]() |
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা | Ekti Borshon Mukhor Shondha |
যারা গুগলে লিখে সার্চ করেন "একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা প্রবন্ধ রচনা, একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট, একটি বর্ষণমুখর দিন অনুচ্ছেদ, বর্ষণমুখর বাংলা রচনা, বর্ষণমুখর সন্ধ্যা কবিতা, একটি বর্ষণমুখর রাত অনুচ্ছেদ রচনা, একটি বর্ষণমুখর রাত অনুচ্ছেদ রচনা pdf, একটি বর্ষণমুখর রাত অনুচ্ছেদ রচনা class 9,10" এই গুলি লিখে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটা।
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা | Ekti Borshon Mukhor Shondha
ভূমিকাঃ বর্ষা বাংলার প্রিয় ঋতু। আর অবিরাম বর্ষণধারা এ ঋতুর প্রধান আকর্ষণ। সারাদিন অঝোর ধারা বর্ষণের মাঝে বদ্ধঘরে আবদ্ধ একলা মনটি কল্পনার দিগন্তে পাখা মেলে দিয়ে কেমন উদাস হয়ে যায়। তখন একটা অজানা অভাববোধ আমাদের সমগ্র চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এমন অবস্থাতেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
'এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘন ঘোর বরিষায়।"
আরো পড়ুনঃ আলসার কত দিনে ভালো হয়?
কী বলা যায়, কাকে বলা যায়, সারাদিন ভেবেও তার কূল পাওয়া যায় না।
বর্ষণমুখর সারাদিন
বর্ষণমুখর সারাদিনঃ সারাদিন বৃষ্টির অবিরাম খেলা চলে আকাশের বুকে। ঘনকালো মেঘে আকাশের মুখটা বিষাদময় হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে খোলা তরবারির মত চমকে ওঠে বিদ্যুৎমালা আর গুরুগম্ভীর বজ্রনিনাদে থেকে থেকে কেঁপে ওঠে শান্ত প্রকৃতি। মনে হয়। শ্রাবণের এই অঝোর ধারার বুঝি শেষ নেই। তাই মেঘের আড়ালে কখন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, আবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, তা কিছুতেই টের পাওয়া যায় না। এক সময় সমস্ত ভাবনাকে বিষণ্ণ আবেগে ভাসিয়ে শ্রাবণ-সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারে এক সময় বাংলার প্রকৃতি ক্রমশ তলিয়ে যায়। শ্রাবণ-সন্ধ্যার জমাটবাধা কালো অন্ধকার আমাদের সমস্ত বিষণ্ণতাকে স্মৃতি রোমশ্বনের দূর অতীতে নিয়ে যায়। বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে মনের নিঃসঙ্গতা বাড়ে। তখন ইচ্ছে হয় অতীতের স্মৃতিবিজড়িত দিনের গান শুনতে কিংবা কবিতা আওড়াতে। তাই বর্ষাকে নিয়ে রচিত হয়েছে বাংলায় অসংখ্য গান ও কবিতা।
শ্রাবণ-প্রকৃতির প্রভাব
শ্রাবণ-প্রকৃতির প্রভাবঃ শ্রাবণ-সন্ধ্যায় এক নিঃসীম কালো অন্ধকার সমগ্র পৃথিবীকে মুহূর্তে গ্রাস করে ফেলে। তখন ভাষাহীন নীরবতায় সমস্ত পৃথিবী গভীর অন্ধকারে ডুবে যায়। কেবল অবিরাম বর্ষণধারা এই নীরব সন্ধ্যাকে ছন্দোময় করে তোলে। শ্রাবণের এই বর্ষণধারাই সন্ধ্যাকে গম্ভীর ও অর্থময় করে তোলে। তখন সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যেন এক নিবিড় তন্দ্রার দেশে পৌঁছে যায়। বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এ নীরব মুহূর্ত গভীর আবেগে হৃদয়কে আপ্লুত করে তোলে। প্রকৃতির এমন করুণ ও বিষণ্ণরূপ আর কখনো দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ মুভি ডাউনলোড করার উপায়।
সারাদিনে অবিরাম বৃষ্টিধারায় পথ-প্রান্তর থাকে জনহীন-শূন্য। মনে হয় কোথাও যেন প্রাণের স্পন্দন নেই, নেই জীবনের উচ্ছল কোলাহল। গাছের পাতায় পাতায় অনেকদিনের জমাটবাঁধা অশ্রু যেন আজ বর্ষার জল হয়ে অবিরাম ঝরছে। এ দৃশ্য আমাদের মনকে অসীমের সন্ধানে এক নতুন কল্পজগতে নিয়ে যেতে চায়। আমরা তখন নিজেকে হারিয়ে ফেলি। এ অবস্থাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
"মন মোর মেঘের সঙ্গী
উড়ে চলে দিগ্-দিগন্তে..... ।
শ্রাবণ-প্রকৃতির এ প্রভাব আমাদের মনে বিশেষভাবে দাগ কাটে।
কর্মহীন অবকাশ
কর্মহীন অবকাশঃ শ্রাবণের এমন দিনে মানুষের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকে। ঘরের চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় মনের মাঝে নানা ভাবনার উদয় হয়। বর্ষার এমনি অপরূপ রূপ দেখেই হয়তো মহাকবি কালিদাস রচনা করেছিলেন তাঁর অমর কাব্য 'মেঘদূত'। আর বৈষ্ণব কবিরা রচনা করেছিলেন মনোহর পদাবলি।
শ্রাবণ-সন্ধ্যা
শ্রাবণ-সন্ধ্যাঃ শ্রাবণের বর্ষণমুখর সন্ধ্যা যেন গ্রামবাংলার নিথর প্রকৃতিকে এক অসীম অন্ধকারে তলিয়ে নিয়ে যায়। কখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা নামে, তা কিছুতেই টের পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার এই জমাটবাধা কালো অন্ধকার আমাদের বিষণ্ণতাকে গম্ভীর ও অর্থবহ করে তোলে। নিজের অস্তিত্ব ভুলে আমরা ক্রমশ হারিয়ে যাই দূর অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে। সমস্ত প্রকৃতি এক ভাষাহীন নীরবতায় ডুবে যায়। কেবল অবিরাম বর্ষণধারা এই নীরবতাকে ভঙ্গ করে এক ছন্দোময় সুরের ধ্বনি তোলে। বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় এই প্রাকৃতিক পরিবেশে আমাদের মন যেন কাকে কাছে পাবার জন্য গুমরে গুমরে কেঁদে ওঠে। কিন্তু তাকে কিছুতেই পাওয়া যাবে না। তাই মনে না-পাওয়ার বেদনা, বাইরের একটানা বর্ষণ সংগীতের সঙ্গে মিলে সন্ধ্যার অন্ধকার এক অভূতপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করে। তখন চার দেয়ালে গৃহবন্দী মন এক অজানা নিরুদ্দেশের পানে ছুটে চলে। কবির ভাষায়-
"হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা
অন্য কোনখানে।'
শ্রাবণ-সন্ধ্যার এ ভুবন ভুলানো পরিবেশ অতিক্রম করার শক্তি মানুষের নেই।
উপসংহার
উপসংহারঃ শ্রাবণ-সন্ধ্যার বর্ষণমুখর প্রকৃতি মানবমনে নতুন নতুন ভাবের জন্ম দেয়। ভিতরে ভাবের তোলপাড় আর বাইরে অঝোর বৃষ্টির ধারা মানুষের মনে অসীম প্রভাব বিস্তার করে। বৃষ্টির রিমঝিম নূপুর-ছন্দে মানুষের মন হয়ে ওঠে উতলা। তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাদের মন বাস্তবের কঠিন ভাবনা থেকে অসীম কল্পলোকে হারিয়ে যেতে চায়।

একটি বর্ষণমুখর রাত | একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা প্রবন্ধ রচনা | একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট
বর্ষণ মুখর সন্ধ্যার একটা নিজস্ব রূপ আছে ও একান্তভাবে অনুভব না করলে তার মহিমা বুঝা যায় না। হৃদয়ের বেদনা স্মৃতি বর্ষণমুখর সন্ধ্যার বুক ভরে জেগে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বইমেলা রচনা।
আষাঢ় মাস। সারাদিন আকাশ ছিল ঘন মেঘে ঢাকা। বর্ষার ঝর্ ঝর্ সারাদিন ঝরছে তো ঝরছেই- বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। অবিশ্রান্ত বর্ষণের এ যেন মহোৎসব। বৃষ্টি-বিধৌত পথের দু'পাশে জমে উঠেছে পানি। আশে পাশের ডোবা-নালাও পানিতে টইটুম্বুর।
আরো পড়ুনঃ পৃথিবীর সবচাইতে ভালো গেমের তালিকা।
সারাদিন ঘরে বসেই কাটলো। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাইরে বের হওয়া সম্ভব হয়নি। এক সময় আঁধার ঘন হয়ে আসল। বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তবে প্রকৃতির বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার অনেক পূর্বেই যেন আজ সন্ধ্যা এসেছে। পশ্চিম আকাশের সূর্যাস্তের বর্ণবাহার আজ কারো চোখে পড়ল না। আজকের সন্ধ্যা অন্যান্য দিনের সন্ধ্যা থেকে ভিন্নতর। ঘরের ভেতর আঁধারের আল্পনা। জানালা খুলে দূরে দৃষ্টি দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু চারদিক ঝাপসা। প্রকৃতি যেন স্নিগ্ধ, শান্ত ও পরিচ্ছন্ন। একদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার, অন্যদিকে বৃষ্টির প্রচণ্ডতা, দু'য়ে মিলে কি চমৎকার এ সন্ধ্যা প্রকৃতি। সন্ধ্যার এ রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায়-
“নীল নবগণে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।”
রাস্তায় কোন জন মানব নেই। রাখাল বালকেরা আজ ঘরে আবদ্ধ। নিত্যদিনের মতো গোধূলি লগ্নে গরুর পাল ঘরে ফিরছে না। মাঠে খেলার উৎসব নেই। উঠানে বউ ঝিদের ব্যস্ততা নেই। দূরের কদম গাছটা শ্যামল সৌন্দর্যে মেঘের সাথি হয়েছে। ডালে বসে ভিজে কাক অসহায় আর্তনাদে প্রকৃতিতে কারুণ্য ফুটিয়ে তুলেছে। সাথি হারা বেদনায় তার আত্মা অজস্র বর্ষণের ভেতরেও পিপাসা কাতর। প্রয়োজনের তাগিদে কেউ কেউ ছাতা মাথায় চাল, ডাল, লবণ ইত্যাদি আনতে পথে বেরিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের কাশি হলে কি করনীয়?
ধীরে ধীরে অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে আসছে। বৃষ্টির ফোটা দেখা যাচ্ছে না। মাঠের পাশের বটগাছটি যা নাকি যুগ যুগ ধরে অপরাজেয় সৈনিকের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তাও দেখা যাচ্ছে না। ব্যাঙের একটানা সুর কানের কাছে বাঁশি বাজাচ্ছে। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আযানের ধ্বনি। ঘন ঘন শিয়াল পন্ডিতের করুণ হাহাকার শোনা যাচ্ছে। দূরে মিটি মিটি আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হল লণ্ঠন হাতে নিয়ে কেউ গরু গোয়ালে দিচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ এলইডি টিভির দাম কত?
সন্ধ্যা হয়ে গেল। মা কখন যে হারিকেন ধরিয়ে দিয়ে গেলেন তা নিজেই জানিনা। জানালা থেকে সরে এলাম পড়ার টেবিলে। দু'একটা বই নাড়াচাড়া করলাম। কিন্তু মন কিছুতেই বসল না। রাজ্যের যত গান, যত সুর, যত কথা সবই আজ মনের কোণে এসে বাসা বেঁধেছে। আজ হৃদয়ে কেবলই বিরহ। কি যেন নেই, কিসের যেন অভাব। থেকে থেকে মন বলছে, “এমন দিনে তারে বলা যায়? কিন্তু কাকে বলা যায়। তার উত্তরতো মনে আসে না। এই বর্ষণমুখর সন্ধ্যা আমার মনের ওপর হতে এক সুদীর্ঘকালের পর্দা সরিয়ে ফেলছে। হঠাৎ হৃদয়ে এক অনন্ত সত্যের জ্যোতি অনুভব করলাম। এ সংসার, এ বাড়িঘর কিছুই আমাদের নয়। বিশ্ব আত্মার সাথে আমাদের আত্মা একদিন বিলীন হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ বর্ষাকাল রচনা।
হঠাৎ ঘর থেকে খাওয়ার ডাক আসল। আমার চিন্তার জাল গেল ছিন্ন হয়ে। বর্ষণ মুখর সন্ধ্যার বৈশিষ্ট্য আজ স্পষ্ট হয়ে উঠল। এর কোন তুলনা নেই। হৃদয় দিয়ে এ মুখর সন্ধ্যার সবকিছু উপভোগ করা যায়, মনের কথা মুখরতা পায় না। কিন্তু মনের দুয়ার খুলে যায়-নেচে ওঠে হৃদয়।
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে অথবা Ekti BorshonMukhor Shondha এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।