বইমেলা রচনা | Boi mela rochona class 4,5,6,7,8

বইমেলা রচনা - এই আর্টিকেল আমরা আলোচনা করেছি Boi mela rochona class 4,5,6,7,8 সম্পর্কে। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলে অনেক সহজ উপায়ে বইমেলা রচনাটি শিখতে পারবেন। আমরা অনেক সহজ উপায়ে (Boi mela rochona) দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

বইমেলা রচনা | Boi mela rochona class 4,5,6,7,8
বইমেলা রচনা | Boi mela rochona class 4,5,6,7,8

বইমেলা রচনা | Boi mela rochona class 4,5,6,7,8 | আমার দেখা একটি বইমেলা রচনা

ভূমিকাঃ মানুষের ধূসর নিরাপদ সমতল জীবনে প্রাণের প্রবাহ নামিয়ে আনে উৎসব। উৎসব আয়োজনের সে পথ ধরেই এদেশে মেলা তার বিস্তৃত পরিসর দখল করে আছে। মেলা এদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ। আর মেলার জগতে মিলন পিয়াসী সভ্যতার কনিষ্ঠ সন্তান ‘বইমেলা।' এটি লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের ভাব বিনিময়ের কেন্দ্রও বটে। এখানে ঘটে সভ্যতার প্রাণের চিহ্ন বিভিন্ন বইয়ের সমাহার। যেখানে দেশী বিদেশী কোন বই-ই বাদ যায় না। তাই কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়-

“হেথায় মিশেছে দিশি দিশি হতে,
বিপুল জ্ঞানের ধারা,
শত মনীষীর চিন্তার বানী,
আনন্দে আকুল পারা । ”

বইমেলার ইতিহাসঃ বই মেলা বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হলেও মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিই এর জনক। ত্রয়োদশ শতকের প্রথম দিকে স্টুরব্রিজের মেলার একটি অংশে ‘বুক সেলার্স রো' নামে প্রদর্শিত পুস্তকের মাধ্যমে বইমেলার আয়োজন করা হয় ১৮০২ সালে নিউইয়র্কে। শুধু বইয়ের উপস্থিতি নিয়ে সর্বপ্রথম আধুনিক বইমেলা আয়োজিত ১৯২৪ সালে যা ‘লাইপজিগের বইমেলা” নামে সমধিক খ্যাত।

বাংলাদেশে বইমেলাঃ বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিকে বাঙালি জাতির মানসে চির জাগরুক রাখার প্রয়াসেই প্রথম বই মেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে “এই মেলাটিই ‘একুশে বইমেলা' নামে বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় জীবনে ‘একুশে বইমেলা'র প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে এটি প্রতিনিয়তই সৃষ্টি করছে নতুন নতুন পাঠক ও বই পিপাসুর। ১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে নিয়মিত আয়োজিত হচ্ছে ‘ঢাকা বইমেলা'। পহেলা জানুয়ারি থেকে আরম্ভ হওয়া পনের দিন স্থায়ী এ বইমেলায় দেশী-বিদেশী কবি, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বই স্থান পায়। এছাড়াও ঢাকায় প্রতি বছর আয়োজিত গ্রন্থমেলা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত বইমেলা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। জাতীয় পর্যায়ে এতসব বইমেলার পাশাপাশি জেলা ও থানা পর্যায়েও অনেক বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে যা আমাদের পুস্তক প্রীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

দেশের বইমেলার চিত্রঃ দেশের শীর্ষ স্থানীয় বই মেলাগুলোর চিত্র প্রায় একই ধরনের। এখানে প্রতিটি স্টল মনোরম সাজে সজ্জিত হয়ে প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে যা সত্যিই এক অনাবিল আনন্দের উৎস। পরিচ্ছন্ন-সুন্দর, বর্ণোজ্জ্বল থরে থরে সাজানো তাকে নতুন পাতার গন্ধে মোড়ানো নতুন নতুন বই যা গ্রন্থ প্রেমিকদের বিমোহিত করে। তবে মেলায় আগত সবাই যে বই কেনে তা নয়, অনেকে হাতে তুলে দেখে, দু'একটা পাতা উল্টায়, আবার রেখে দেয়। মেলায় ঘুরে বেড়ানোর আকর্ষণকেও একেবারে অস্বীকার করা যায় না, বইয়ের দোকান ছাড়াও মেলার মূল অংশের ভেতরে ও বাইরে নানারকম পণ্যের সমাহার ঘটে। মেলায় আগতদের কুচকা ও চটপটি খাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব। এছাড়াও বই মেলার অংশ হিসেবে আলোচনা সভা, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নতুন লেখকের নতুন বইয়ের উপর আলোচনা, কবিতা ও ছড়া আবৃত্তিসহ নানা রকম বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ৷ সব মিলিয়ে ছোট্ট সোনামণি থেকে শুরু করে প্রাচীন বই প্রেমকটি পর্যন্ত এখান থেকে লাভ করে এক অনাবিল আনন্দ।

বইমেলার গুরুত্বঃ ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতীয় জীবনে বই মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণ বাজারের গতানুগতিক পরিবেশে বই মেলা পাঠকের মনে অরুচির “সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বই মেলার রুচিকর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ক্রেতাকে বই কিনতে প্ররোচিত করে। মেলা উপলক্ষে সদ্য প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ের মত বিপুল সমাবেশ পাঠকদের বইয়ের প্রতি আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিক্রেতারা অল্প লাভে বই বিক্রি করে নতুন পাঠক তৈরির আশায়। এতে মানুষের পুস্তকপ্রীতি বাড়ে, বাড়ে বইয়ের জনপ্রিয়তা, বাড়ে বিক্রি। ফলে প্রকাশক আরো বই প্রকাশে উৎসাহিত হয়। প্রকাশক সদ্য প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশ করে বইয়ের খবর পৌঁছে দেয় দূর-দূরান্তের পাঠকের কাছে। বই মেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লেখকদের আলোচনা চক্র পাঠকের সাংস্কৃতিক রুচিকে উদ্দীপ্ত করে। বই মেলা বই বিক্রির একটি নতুন পদ্ধতি। তবে এর আসল গুরুত্ব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। একত্রে এত বই আলাদাভাবে লক্ষ্য করা, নিজের হাতে উল্টে পাল্টে দেখা, বিষয়-বৈচিত্র্যকে মেনে এত অধিক সংখ্যক পুস্তকের প্রতি দৃষ্টি দর্শকদেরকে অবাক বিস্ময়ের দেশে নিয়ে যায়। তদুপরি বিচিত্র নামে ভিন্ন রুচির বিভিন্ন স্বাদের খাবারের দোকান পাঠকদের রুচির পরিতৃপ্তি ধারণ করে ।

বইমেলার প্রভাবঃ বইমেলা মূলত আবাল বৃদ্ধ বনিতার মিলন মেলা। এর প্রভাবে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয় প্রীতিপূর্ণ বন্ধন। মুছে যায় সামাজিক বেদবুদ্ধির ফলে সৃষ্ট ব্যবধান। বিখ্যাত লেখকদের বিক্রিত বইয়ে স্বাক্ষর দান, খ্যাতিমান কবির স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি স্বভাবিভাবেই দর্শক-পাঠকদের দারুণভাবে প্রভাবিত করে। দর্শক-পাঠক আবিষ্কার করে তার নীরব সঙ্গী বইকে। এ সঙ্গী তাকে শুধু জ্ঞান দিয়ে তুষ্ট করে না, বরং তার মনুষ্যত্বকেও উজ্জ্বীবিত করে, পথ দেখায় জীবন সমুদ্রে দিশেহারা নাবিককে ধ্রুবতারার ন্যায়। বিশ্ব বইমেলায় বলা এক উক্তি এখানে উল্লেখ্য - “এখানে দেশে-দেশে মানুষে-মানুষে সংঘর্ষ ও কলহ নেই। এখানে আছে বোঝার আর বোঝাবার প্রতীক বই।”

উপসংহারঃ বইমেলা মানুষের চিন্তার পরিমাপক। এর মাধ্যমে মানুষের রুচি ও আদর্শের উন্নতি ঘটে। তাই বইমেলার উন্নয়নে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। কেননা বই মানুষকে দেয় জ্ঞান, জ্ঞান মানুষকে করে মহীয়ান। আর এসব মহীয়ান মানুষই জাতীকে করে উন্নত। তাই শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসারে বইমেলার অবদানকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে আরো বেশি করে বই কিনে রবীন্দ্রনাথের বারন সত্ত্বেও-

বই কেনা শখটারে দিয়ো নাকো প্রশয়;
ধার নিয়ে ফিরিয়োনা,
তাতে নাহি দোষ রয়।


অন্যান্য আর্টিকেল দেখুন !!

বইমেলা কোথায় হয়? | বইমেলা প্রতিবেদন রচনা

বইমেলা রচনা | Boi mela rochona class 4,5,6,7,8
বইমেলা রচনা | বইমেলা রচনা pdf | বইমেলার বৈশিষ্ট্য

বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে এবং বর্ধমান হাউজ ঘিরে, এই ছাড়াও যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেকোনো উপজেলা, বা যেকোনো বড় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারনত বইমেলা মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলাদেশের আনাচে - কানাচে, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা বা একুশে বইমেলা বাংলাদেশের অন্যতম মেলা।

বইমেলা কখন শুরু হয়? | বই মেলার গুরুত্ব

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে বইমেলা শুরু হয়। অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রী বিভিন্ন বই মেলা উদ্বোধন করে থাকে। সাধারনত ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলা ২০২২ শুরু হয়ে থাকে।

বইমেলা কতদিন পর্যন্ত চলে? | বইমেলা রচনা pdf | বইমেলার বৈশিষ্ট্য

বইমেলা কিছু কিছু স্থানে বা কিছু কিছু জায়গায় বেশি দিন থাকে বা কম সময় থাকে। তবে বেশির ভাগই দেখা যায় ৭-১৫ দিন পর্যন্ত বইমেলা চলতে থাকে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়? | বই মেলার উদ্দেশ্য

প্রতিবছর (জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে) বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে এই বইমেলার। এখন পর্যন্ত এইটি সবচেয়ে বড় বই মেলা।অক্টোবর মাসের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। যদি সম্ভব হয় এবং আপনি যদি বই পড়তে বেশি পছন্দ করেন তাহলে একবার হলেও এই বইমেলা থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

(বইমেলা রচনা) এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে এবং (Boi mela rochona class 4,5,6,7,8) এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ