বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা (bangladesh poshak shilpo rochona)
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা - প্রিয় বন্ধুরা নিচে দেওয়া হলো "bangladesh poshak shilpo" এই রচনাটি। বন্ধুরা আমরা অনেক সহজ উপায়ে / অনেক সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনাটি। আমরা আশা করি "বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা hsc" এই রচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে। যাইহোক দেখে নিন poshak shilpo Bangladesh রচনাটি।
![]() |
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা |
আরো পড়ুনঃ যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা (HSC) | poshak shilpo Bangladesh
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের অনুন্নত শিল্পখাতের মধ্যে পোশাক শিল্প একটি ব্যতিক্রমধর্মী খাত। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বা তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় পোশাক শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও সম্প্রতি এ শিল্পকে ঘিরে নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটানো না গেলে আমাদের দেশকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের সূচনা ও প্রকারঃ পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু মাত্র কুড়ি বছর আগে। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ৯২টি ইউনিট নিয়ে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে মাত্র দু'বছরে এ শিল্পের ইউনিট সংখ্যা ৭১৫-তে পৌঁছে। এরপর আর এ শিল্পকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিট এ শিল্পে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্প বিকাশের কারণঃ বাংলাদেশে পোশাক শিল্প বিকাশের পেছনে নানা অনুকূল কারণ শনাক্ত করা যায়। আমাদের বিশাল জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ বেকার। বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসুযোগ খুবই কম। ফলে এরা সস্তায় শ্রম বিক্রি করতে প্রস্তুত। এ স্বল্প বেতনভোগী শ্রমশক্তিই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। অপরদিকে পোশাক শিল্পের মুখ্য ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেওয়ায় এ শিল্পের বিকাশে গতি সঞ্চারিত হয়েছে।
পোশাক শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা যায় পোশাক শিল্পকে। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে পোশাক শিল্প থেকে। আমাদের মোট জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান মাত্র ১৫.৯৭ ভাগ। আর শিল্পখাতের মোট উৎপাদনের ৭৩ ভাগই আসে পোশাক শিল্প থেকে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের গড়-পড়তা ৭৬ ভাগই আসে এ খাত থেকে। ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ৩২৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে (জুলাই-মার্চ মেয়াদে) এ খাত থেকে আয় হয়েছে ২৪৭৯.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট দেশজ উৎপাদনে পোশাক শিল্পের অবদান ৫.০০ ভাগ। তাছাড়া পোশাক শিল্পের সহায়ক শিল্পরূপে আরও নানা প্রকার শিল্প-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। সরাসরি পোশাক শিল্পে এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে কোটি কোটি ডলার ।
পোশাক শিল্পের বাজারঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মূলত রপ্তানিমুখী। আভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য ভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্রায়তনের পোশাক শিল্প রয়েছে। বাংলাদেশের উৎপাদিত পোশাকের বাজার ২০ থেকে ২৫টি দেশে বিস্তৃত হলেও এর মুখ্য ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বাজার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যেও কিছু পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। আবার পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য কাপড়, সুতা, জীপার, বোতাম, সেলাই মেশিন প্রভৃতি জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যাণ্ড, ইতালিসহ অনেক দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
পোশাক শিল্পের সার্বিক গুরুত্বঃ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষায় পোশাক শিল্পের ভূমিকা সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। এ খাতকে কেন্দ্র করে একটি কর্মপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেকারত্ব লাঘবে এ খাতের ভূমিকা অপরিসীম। পোশাক শিল্পে অন্তত ১৮ লাখ শ্রমিক কাজ করছে, যাদের শতকরা ৯০ ভাগই নারী। অসহায়-অসচ্ছল পরিবারের নারী-পুরুষ এ শিল্পে জড়িত হয়ে ন্যূনতন জীবন যাপনের অবলম্বনটুকু খুঁজে পেয়েছে। বিশেষ করে গরিব মেয়েরা নিজেদের জীবিকার সংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের অন্যের করুণা ও নির্যাতনভোগী হয়ে আর জীবন কাটাতে হচ্ছে না। এসব নারী ও পুরুষ কর্মসুযোগ না পেলে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হত। পোশাক শিল্পের সহযোগী শিল্প-বাণিজ্য হিসেবে গড়ে ওঠা ফেব্রিক্স শিল্প, বোতাম শিল্প, জীপার ও ইলাস্টিক শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, পরিবহন শিল্প, বায়িং হাউস প্রভৃতিতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পোশাক শিল্পের সংকটঃ এ শিল্পেও কিছু সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকদের উৎপাদন মান উন্নত নয়। হরতাল, ধর্মঘটের কারণে প্রায়শ ঠিক সময়ে মালামাল আমদানিকারকদের কাছে পৌঁছানো যায় না। পরিবহন, বিমান ও সমুদ্র বন্দরে ঘুষ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে শিপমেন্ট বাধার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অনুন্নত কাঁচামাল, যথাযথ কাঁচামাল ব্যবহার না করা ও মিথ্যা ঘোষণায় কাঁচামাল আমদানি পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০০১ সালে নিউইয়র্কে টুইন টাউয়ার ধ্বংস, ইরাক যুদ্ধ, মুক্তবাজার অর্থনীতির চাপ প্রভৃতি কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা ও মূল্যও কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের সেলাই বা প্রস্তুতের মজুরিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

এদিকে ২০০৫ সাল থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ শিল্পে এমএফএন কার্যকর এবং জিএসপি সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোটা সুবিধার বদলে বাংলাদেশকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। ২০০৬ সালে ন্যায্য বেতন ভাতার দাবিতে পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলন ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হয় শ্রমিক অসন্তোষ পোশাক শিল্পের জন্য নতুন উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুশ্চিন্তার কালো মেঘ অপসারণঃ ২০০৫ সালকে সামনে রেখে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল এক উদ্বেগাকুল পরিবেশ । সকলের ধারণা ছিল জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশ চীন, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও সাব-সাহারা অঞ্চলের সাথে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। যেহেতু বাংলাদেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ এ শক্ত অবস্থানে নেই সেহেতু বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এই আশংকার পটভূমিতে যথারীতি জিএসপি বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সম্ভাব্য সংকটকে পাশ কাটিয়ে নতুনরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ২০০৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ সালের সমাপ্তিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে এ দেশের পোশাক শিল্প যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী বলে প্রমাণ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ এবং রাজনৈতিক সংঘাত দূর করা গেলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এদিকে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য একটি ন্যূনতম মজুরি কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
উপসংহারঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়ার হাউস গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তোলার জন্য সরকার সহজশর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দূর ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অবসানেরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সরকার সদিচ্ছার প্রমাণ দিচ্ছে।
![]() |
পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ কেন? | বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা |
আরো পড়ুনঃ বন্ধ সিমের লোকেশন জানার উপায়।
পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ কেন? পোশাক শিল্প কি?
মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে, দেশের চাহিদা বাড়ানোর জন্য, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা, নারী ও পুরুষের কর্মের সংস্থান, বেকারত্ব কমানোর ক্ষেত্রে, কর্মসংস্হানের সুযোগ হয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। এই ছাড়াও পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অনেক যা বলে বুঝানো যাবে না।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন চট্রগ্রাম।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা মোটামুটি ভালো বলা যাই কারন আমাদের দেশের পোশাক শিল্প মাত্র ১২ হাজার ডলার রপ্তানি আয় দিয়ে শুরু করে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্জিত হয় / ইনকাম হয় তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। তাহলে বুজতে পারতেছেন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অনেক গুরুত্ব।
আরো পড়ুনঃ এই নাম্বার টা কোথায় আছে।
আমাদের শেষ কথা | বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা
এইখানে শেষ হলো আমাদের লেখা "বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা" এই আর্টিকেলটা। প্রিয় বন্ধুরা "bangladesh poshak shilpo rochona" এই আর্টিকেলটা কেমন লাগল অব্যশই কমেন্ট করে বলবেন। প্রিয় বন্ধুরা poshak shilpo bangladesh আর্টিকেলটা আপনাদের উপকার হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে আমাদের সাহায্য করুন।অভিযোগঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে বা আপনাদের কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুণ।