আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা | Amar Priyo Shikkhok Rachana

আমার প্রিয় শিক্ষক এই রচনাটি আলোচনা করা হয়েছে এইখানে। যাদের তোমার প্রিয় শিক্ষক রচনাটি প্রয়োজন এইখান থেকে দেখে নিন বা শিখে নিন। এই ছাড়াও যারা গুগলে লিখে সার্চ করেন আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা for class ৭, আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা ৫ম শ্রেণি, শিক্ষকের গুরুত্ব রচনা, তোমার প্রিয় শিক্ষক, ইত্যাদী এইগুলি লিখে তাদের জন্য আজকে এই আর্টিকেল।

আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা | Amar Priyo Shikkhok Rachana
আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা | Amar Priyo Shikkhok Rachana

আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা | Amar Priyo Shikkhok Rachana | তোমার প্রিয় শিক্ষক

ভূমিকাঃ প্রত্যেকেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে কোন না কোন আদর্শ ব্যক্তিত্বকে অনুসরণের মধ্য দিয়ে। একজন ছাত্রের সবচেয়ে বেশি সান্নিধ্য লাভের সুযোগ ঘটে একজন শিক্ষকের সাথে। এ কারণে অজ্ঞাতসারেই তার মনে আসন করে নেয় কোন না কোন প্রিয় শিক্ষক। সন্তানয়েহে একজন শিক্ষক যখন কোন ছাত্রকে শেখান তখন পরস্পরের মধ্যে গড়ে ওঠে এক মধুময় সম্পর্ক। একজন ছাত্র হিসেবে আমার সবচেয়ে পছন্দের যে মানুষটি তিনি একজন শিক্ষক। অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ স্যার শুধু আমার প্রিয় শিক্ষকই নন তিনি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অনুপম পথ প্রদর্শক।

প্রথম পরিচয়

প্রথম পরিচয়ঃ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমি আমার আব্বার সাথে একবার রামচন্দ্রপুরে যাই। সেখানে আমার মামার বাসা। ফেরার সময় হঠাৎ স্যারের সাথে দেখা। আমার আব্বা স্যারের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেন। আমার ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পাবার কথা শুনেই স্যার আমাকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করলেন। তাঁর কথাগুলো আমাকে মন্ত্রমুখের ন্যায় আকৃষ্ট করল। আমাকে তিনি তার কলেজে ভর্তি হবার কথা বললেন। দুর্ভাগ্যবশত আমার মাধ্যমিকের ফলাফল তেমন ভাল না হলেও তিনি নির্দ্বিধায় আমাকে উনার কলেজে ভর্তি করে নেন।

কি পেলাম

কি পেলামঃ মাধ্যমিকের ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশা আমাকে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে। ফলাফল প্রকাশের পর প্রথম কদিন সারাদিন কান্নাভেজা চোখে বন্ধ ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ আটকে রাখি। হঠাৎ করেই মামার চিঠি আমার হাতে আসে। মজিদ স্যার নাকি আমার খোজ নিয়েছেন এবং স্যার খুব দ্রুত তাঁর সাথে দেখা করতে বলেছেন। পত্র পাবার পরদিনই আমি হোমনাতে আমার মামা বাড়িতে চলে গেলাম। মামার বাসার পাশেই স্যারের নিজ নামে তাঁর কলেজ। ঐদিনই কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম স্যার পরদিন কলেজে আসবেন। আমি পরদিন সকাল থেকেই উচ্ছিন্নতার সাথে স্যারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। হঠাৎ মামা এসে আমাকে স্যারের নিকট নিয়ে গেলেন। আমাকে দেখেই স্যার অত্যন্ত স্নেহমাখা চোখে আমার দিকে চাইলেন এবং আমাকে বসতে বললেন। মুহূর্তের মধ্যেই স্যারের প্রেরণাদীপ্ত " আমাকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে তুলল। তাঁর কথায় আমি যেন প্রাণহীন বুকে প্রাণ ফিরে পেলাম। আমার নিরাশ প্রাণে তিনি জ্বালিয়ে দিলেন আশার আলো। হতাশার কালোমেঘ যেন আমার অন্তর থেকে চির তিরোহিত হল। মনে হল এ পাওয়া যেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।

অবদানের ব্যাপকতা

অবদানের ব্যাপকতাঃ দরিদ্র এবং দুর্বল ছাত্রদের নিয়ে যিনি জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে তাদেরকে পৌঁছে দিচ্ছেন সাফল্যের শীর্ষে – তাঁর এ একটি অবদানের পরিসীমা টানলেই তা ব্যাপকতার দিক দিয়ে হবে সুদূরপ্রসারী। একজন ছাত্রকে ভর্তি করানোর পর থেকেই তার মেধাকে শানিত না করা পর্যন্ত তিনি যেন স্বস্তি পান না। এমনিতেই এ কলেজটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী কলেজ। নিভৃত পল্লীতে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত। ছাত্রদেরকে বাধ্যতামূলকভাবেই হোস্টেলে থাকতে হয়। প্রতিটি হোস্টেলে রয়েছে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান। প্রতিটি হোস্টেলের দায়িত্বে রয়েছেন এক একজন করে শিক্ষক। কলেজে শিক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিও ভিন্নধর্মী। একই বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষক সপ্তাহে কয়েকটি পরীক্ষা নেন এবং সেগুলো দেখার পর ফলাফল প্রকাশ করেন। তাতে করে ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিদিনের পড়ালেখার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারে। ছাত্র- ছাত্রীদের অভিভাবকে তাদের ফলাফল অবগত করানের জন্য এখানে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। একারণে ছাত্র-ছাত্রীদের কোথাও ফাঁকি দেবার সুযোগ নেই। যেহেতু স্যার নিজেই এ কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে এরূপ পদ্ধতির প্রচলন একান্তই তাঁর। তাঁর এ পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। স্যার শুধু এখানেই তাঁর অবদান সীমিত রাখেন নি। তিনি একই নিয়মে হোমনাতে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন ছাত্রের জন্য 'সহায়ক পুস্তক' ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তিনি 'পপি লাইব্রেরী' নামে গড়ে তোলেন নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থেকে নিয়মিত সেবামূলক কাজ করে চলেছেন।

আদর্শ ব্যক্তিত্ব

আদর্শ ব্যক্তিত্বঃ তিনি শুধু আমার প্রিয় শিক্ষকই নন তিনি আমার একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যক্তিত্বে শুধু আমিই মুগ্ধ নই আমার সহপাঠীরা সকলেই তার আদর্শকে অনুসরণ করে চলে। একজন অধ্যক্ষ হিসেবে সাধারণ ছাত্রদের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে দূরত্ব না রেখে তিনি সকল ছাত্রের সাথেই আপনজনের ন্যায় মেশেন। বিভিন্ন রসিকতার মধ্য দিয়ে তিনি ছাত্রদের খুবই আন্তরিক করে তোলেন। - জীবন যাপনের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সাধারণ। বর্তমান বিলাসিতার যুগে স্যারকে দেখলে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কথা মনে পড়ে। তাঁর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে শুধু ছাত্ররাই নয় আশে পাশের প্রতিটি মানুষই যেন পরম মুগ্ধ।

অনুভূতিপ্রবণতা

অনুভূতিপ্রবণতাঃ স্যারের অনুভূতিপ্রবণতা আমাকে চরমভাবে মুগ্ধ করে। আমার আর্থিক দিকটা স্যার জানতেন। তাই ফরম ফিলাপের সময় তাঁর কাছে যাই। তিনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমাকে দেখেই আমার সমস্যা বুঝতে পারেন। তিনি নিজ থেকেই আমাকে ফরম ফিলাপের জন্য ন্যূনতম টাকা পরিশোধ করতে বলেন। কলেজের যেকোন সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি যেন আগে থেকেই সব বুঝতে পারতেন এবং সমাধানের নির্দেশনা দিতেন। তাঁর অনুভূতি-প্রবণতার গুণেই তিনি প্রতিটি ছাত্র, শিক্ষক এবং প্রতিবেশীদের প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন।

উপসংহার

উপসংহারঃ একজন শিক্ষক যে কিভাবে একটি হতাশাগ্রস্ত, নির্জীব প্রাণে নব প্রেরণার সৃষ্টি করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ স্যার। আজ প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে যদি তাঁর মত শিক্ষক থাকতেন, তাহলে দেশের শিক্ষার ভাবমূর্তিই পাল্টে যেত। সকল কালিমা দূরীভূত হয়ে শিক্ষার ক্ষেত্র সূচিত হত এক নতুন যুগের।


অন্যান্য আর্টিকেল


আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকলে এবং amar priyo shikkhok rachana এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ