আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | Amader Muktijuddho Rachana

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা - এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি Amader Muktijuddho Rachana সম্পর্কে। বন্ধুরা আমরা অনেক সহজ উপায়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করি এই রচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ২০০ শব্ধ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৩য় শ্রেণি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৫ম শ্রেণি ২০০ শব্দ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৫ম শ্রেণি, বঙ্গবন্ধু ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ২য় শ্রেণি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ৪র্থ শ্রেণি এই সব শ্রেণীর জন্য আজকের এই আর্টিকেল টি।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | Amader Muktijuddho Rachana
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | Amader Muktijuddho Rachana

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা | Amader Muktijuddho Rachana | আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ শ্রেণী

ভূমিকাঃ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি জাতির মাঝেই প্রবল। পরাধীন জাতিগুলোই বুঝতে পারে স্বাধীনতাহীনতার মর্মজ্বালা কতখানি। স্বাধীনতার স্বর্ণমৃগ লাভ করার জন্য যুগ যুগ ধরে পরাজিত ও পরাধীন জাতিগুলো সংগ্রাম করে এসেছে। ঔপনিবেশিক, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো বরাবর অন্য জাতিকে পদানত করে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষার কারণে পরাধীন জাতিগুলো যে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছে তাতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেসে গেছে শাসক ও শোষকদের অশুভ শক্তিবলয়। বিশ্বের মধ্যে রক্তদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তপথ মাড়িয়ে ১৯৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

বাঙালির স্বাধিকার চেতনা

বাঙালির স্বাধিকার চেতনাঃ ধন-ধান্যে পুষ্পভরা এ বাংলাদেশের প্রতি বারবার বিদেশি শক্তির শোন দৃষ্টি পড়েছে। সেই মধ্য যুগে এদেশে এসেছে তুর্কি, আফগান, পাঠান ও মুঘলরা। এর বিদেশি শাসনের মাঝেই পর্তুগিজ, দিনেমার, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজরা এসেছে এদেশের সম্পদ লোভে। কখনও এরা ব্যবসায় কখনও সরাসরি তস্করের ভূমিকায় সরাসরি লুণ্ঠন করেছে বাংলাদেশের সম্পদ। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ বেনিয়ারা ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতাকে হরণ করে কায়েম করে ঔপনিবেশিক শাসন। ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা বিদায় নিলে নতুনভাবে বাংলাদেশকে পদানত করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র। প্রায় হাজার বছরের এ শাসন-শোষণের মাঝেও বাঙালি জাতি মাথা নত করে অন্যায়কে মেনে নেয় নি। স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাতিকে বরাবর সংগ্রামে নিরত রেখেছে। সিপাহি বিপ্লব, ফকির বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বরাবর তার প্রতিবাদী চেতনার স্বাক্ষর রেখেছে। বাঙালির জাতীয় চেতনায় সর্বদা একটি কথাই বেজেছে-

“স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায় ? 

দাসত্ব-শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়! 

কোটি-কল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে
নরকের প্রায়

দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গসুখ তায় হে
স্বর্গসুখ তায়।”

বাংলাদেশের পরাধীনতার নবপর্যায় প্রায় দুশ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পটভূমিতে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা বিদায় নেবার পর ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকলেও তা হয় নি। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষে ভারত প্রজাতন্ত্র এবং পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র নামে প্রতিষ্ঠিত হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। জনগণের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রে। পূর্ব বাংলা হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মাঝে সাড়ে বারো শ' মাইলের দূরত্ব সত্ত্বেও একক রাষ্ট্র গঠন ছিল স্রেফ অবাস্তব বিষয়। ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনের অবসানে মূলত বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণের সূচনা হয়। সূচনা হয় বাংলাদেশের পরাধীনতার নব পর্যায়।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-বৈষম্য

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-বৈষম্যঃ স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। ধর্মীয় পরিচয়ে অখণ্ড জাতিসত্তার কল্পনা করা হলেও শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয় চেতনার ভিত্তিতে অসাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে নি। বরং শুরু থেকেই তারা এদেশের উপর শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নির্লজ্জ বৈষম্য অপশাসনের এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। একদিকে অধিকার বস্তৃিত করে রাখা, অন্যদিকে এদেশের সম্পদ পাচার করা হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানে। স্বাধীন দেশের মাঝে একটি পরাধীন জাতির অস্তিত্ব দেখতে ছিল বিসদৃশ। শোষণ-বৈষম্যের এ ঘৃণ্য অপচেষ্টা বাঙালি জাতিকে হতাশ ও বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। মাতৃভাষার অবমাননা, অর্থনৈতিক শোষণ ও সম্পদ পাচার, উন্নয়নে একরোখা নীতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম-নির্যাতন বাঙালি জাতিকে আবারও স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে বাধ্য করে।

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী আন্দোলন

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী আন্দোলনঃ পাকিস্তানি অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির আন্দোলনের সূত্রপাত হয় বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পর সরকার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে এককভাবে ঘোষণার উদ্যোগ নিলে বাংলার মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে সংগ্রামী জনতা তা ভঙ্গ করে। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরসহ নাম না-জানা আরও অনেকে। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নবপ্রেরণার আষাদ লাভ করে। এরপর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা চলতে থাকে স্বাধিকার লাভের জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও প্রতিবাদী আন্দোলন। '৬২ সালে আইয়ুব শাহীর ভ্রান্ত

সংবিধানের বিরুদ্ধে, '৬৪ সালে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে, '৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচিকে সামনে রেখে ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে বাংলার জনগণ দুর্বার গণ-আন্দোলনে যুক্ত হয়। এ আন্দোলন ১৯৭১ সালে রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানে। সরকার ১৯৭০ সালের শেষার্ধে প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। বাংলার মানুষ তাদের পছন্দের দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে স্বাধিকার অর্জনে প্রয়াসী হয়।

অবশ্যম্ভাবী মুক্তিযুদ্ধের মুখে বাঙালি জাতি

অবশ্যম্ভাবী মুক্তিযুদ্ধের মুখে বাঙালি জাতিঃ বাঙালি জাতি নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাধিকার অর্জন করতে চেয়েছিল কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে সরকার ক্ষমতা অর্পণে গড়িমসি করতে থাকে। আলোচনার নামে চলতে থাকে গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বানের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলন। উন্মাতাল বাংলাদেশ সে ডাকে প্রবলভাবে সাড়া দেয়। কার্যত দেশ চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনতার সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু জ্বালাময়ী ভাষণের এক পর্যায়ে সুস্পষ্টভাবে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।' সমগ্র জাতি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হল। অস্ত্রের ভাষায় বাংলার মানুষকে স্তব্ধ করার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২৫ মার্চ গভীর রাতে নিরস্ত্র জনতার উপর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়। অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে বাঙালি জাতির সামনে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা রইল না।

মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ঃ গ্রেফতার হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে নীত হবার পূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। পরদিন তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একাধিক বার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো বাঙালি জাতি এবার শত্রুবিনাশে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। দলে দলে মানুষ আশ্রয় নিল প্রতিবেশী ভারতে। সেখানে শুরু হল সামরিক প্রশিক্ষণ। দেশের ভেতরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর প্রভৃতি বাহিনীর প্রশিক্ষিত সৈনিকরা বিদ্রোহ করল এবং ঐক্যবদ্ধ হল। শুরু হল প্রতিরোধ যুদ্ধ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ মুক্তিবাহিনীতে যুক্ত হল। দেশপ্রেমিক বাঙালির অকাতর আত্মদান ব্যর্থ হল না। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে স্বীকৃত পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হল। ১৯৭২ সালের ষোলই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হল। ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবন এবং অগণিত মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি লাভ করল তার হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

উপসংহার

উপসংহারঃ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবন যে স্বাধীন দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েছে তারই নাগরিক হতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করি। তবে একথাও সত্য যে, যে নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবন দিয়েছিল তার অর্জন আজও হয় নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে পরিব্যাপ্ত হয় নি, পূরণ হয় নি উদার, শোষণহীন ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জাতি গঠনের স্বপ্ন। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই লজ্জার বিষয়।

অন্যান্য আর্টিকেল !!

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য দেওয়া থাকলে এবং Amader Muktijuddho Rachana এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ