আলসার কত দিনে ভালো হয় - আলসার কি এবং করনীয়

আলসার কত দিনে ভালো হয় - আলসার কি এবং করণীয় ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আজকে আমাদের এই আর্টিকেল। আলসার মূলত ৫-৮ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় মাসের পর মাস এই আলসারের যন্ত্রনায় ভুগতে হয়। আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে বড় একটি উপায় সেটি হলো নিয়ম মেনে চলা। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ঠিকমতো খাবার খাওয়া। টেনশন মুক্ত থাকা। নিজেকে খুশি রাখা। ঘুমানোর আগে খাবার খেয়ে নেওয়া।

আলসার কত দিনে ভালো হয়

আলসার হলে অনেক ধরনের পরীক্ষা করতে হয় আশা করি ডাক্তারের কাছে গেলে সব বুজে যাবেন। আলসার মূলত এক ধরনের ঘা। বেশির ভাগই সময় পেটের মাজখানে অর্থাৎ নাভির ঠিক উপরে আলসারের সমস্যা দেখা দেয়। এই ছাড়াই শরীরের বাহ্যিক জাগায় আলসারের সমস্যা হয়ে থাকে। তবে টেনশনের কোন কারন নেই আলসার দ্রুত ভালো করা যায়। তার জন্য আমাদের আর্টিকেলটা শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেন।

সূচী পত্রঃ যা জানতে পারবেন

  • আলসার কত দিনে ভালো হয়?
  • আলসার কি?
  • আলাসর কত প্রকার?
  • আলসার রোগ হলে কি হয়?
  • পেটে আলসার কি?
  • আলসার কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
  • আলসার কি ভালো হয়?
  • পেপটিক আলসার কি?
  • পেপটিক আলসারের লক্ষণ
  • কি খেলে আলসার ভালো হয়?
  • আলসার হলে কি খাওয়া যাবে না?
  • আলসারের ব্যথা কেমন লাগে?
  • আলসার হলে কি কি খেতে হয়?
  • আলসার রোগের খাবারের তালিকা
  • আলসার হলে কি ক্যানসার হয়?
  • আলসার হলে কি ঔষধ খাব?
  • আলসার মূল থেকে দূর করতে কী করবেন?
  • পেটের আলসারের কারণে কী খাওয়া উচিত নয়?
  • আমি কি আলসারে দই খেতে পারি?
  • আমি কি আলসারে কলা খেতে পারি?
  • আলসার ব্যথা কোথায় অবস্থিত?
  • আলসার থেকে মুক্তির উপায়?

আলসার কত দিনে ভালো হয়?

আলসার কত দিনে ভালো হয় এইটা বলা মুশকিল তবে ডাক্তাররা অথবা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে আলসার ভালো হতে প্রায় ৮ সপ্তাহের মতো লাগে। বেশিরভাগ আলসার প্রায় ৮ সপ্তাহের মধ্যে ভালো বা নিরাময় হয়ে যায়। এইটা বয়সের উপর নির্ভর করে। ঠিকমতো নিয়ম মেনে চলতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি আলসার ভালো হয়ে যায়। আলসার থেকে ভালো হওয়ায় জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে সবসময়। কারন আলসার এক প্রকারের ঘা। অনেকে বলে থাকে আলসার নিরাময় হয় না। আসলে এইটা ভুল ধারনা। হোমিওপ্যাথি ওষুধ যদি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে ১০০% নিরাময় করা যাবে আলসার।

আলসার কি?

আলসার কি এবং করনীয়

আলসার হলো সাইকোসোমাটিক কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। আলসার আবার এক প্রকার ঘা। এইটা দেখতে ঘা এর মতো দেখায়। যা পৌষ্টিকনালির মিউকাস আবরণীতে ও ত্বকের উপরে সৃষ্ট ঘা। আমরা যদি আরো সাধারন ভাবে বলি তাহলে বলব আলসার কথার অর্থ ক্ষত বা ঘা। এটি পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে। আস্তে আস্তে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগ হওয়ার একটি কারন সেটি হলো পরিপাকতন্ত্রে অ্যাসিড বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হলে। আবার অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মুখের ভিতরে ছোট ছোট ঘা হয়ে থাকে। তবে এই সময় এইগুলি এর বেশি কষ্টকর না। ঠিকমতো ভিটামিন জাতীয় খাবার খেলে ঠিক হয়ে যায়।

আলসার কত প্রকার?

আলসার সাধারনত দুই প্রকার হয়ে থাকে। এই দুইপ্রকার আলসার হলো গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং ডিওডিনাম আলসার। এখন জেনে নিন এই আলসার গুলি কেন হয়ে থাকে। এবং এই আলসার গুলির লক্ষণ কি।


গ্যাস্ট্রিক আলসার হলো খাদ্যথলির ভিতর যে আলসার হয় ঐটি। ডিওডিনাম আলসার হলো ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশে যে আলসার হয় ঐটি। অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হওয়া কারনে এই রোগ গুলি হয়ে থাকে। আলসার সৃষ্টি হয় ‘এইচ পাইলোরি’ নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে।

এই রোগ গুলির নানান ধরনের লক্ষণ রয়েছে সেগুলি হলঃ খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা, বুকজ্বালা, পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা, মুখ দিয়ে নুন জল ওঠা, গা বমি ইত্যাদি হওয়া। আরো জেনে রাখুন যখন খাদ্যথলিতে আলসার হয় অথবা গ্যাস্ট্রিক আলসার হয় তখন খাওয়ার পরেই পেট জ্বালা করবে। যার ফলে সেই সময় রোগী কিছু খেতেই চাইবে না।

আলসার রোগ হলে কি হয়?

নাভির একটু উপরে একঘেয়ে ব্যাথা অনুভব হয় অর্থাৎ সাধারণত পেটের ঠিক মাঝ বরাবর আলসার রোগটি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় কোন রকম খাবার খেলে এই রোগ হতে পারে এবং বেশি ব্যাথা করে। এই ছাড়াও অনেক সময় খালি পেটে থাকলে এই ব্যাথা শুরু হয়। অনেক সময় বমি হতে পারে যদি এমন হয় তাহলে মনে করবেন আলসার মারাত্বক ভাবে রূপ নিয়েছে। আলসার রোগ নির্ণয় করা যায় এন্ডোস্কোপি বা বেরিয়াম এক্স-রের মাধ্যমে।

পেটে আলসার কি?

এটি পেটের আলসার কে বুঝায়। পেটের অঞ্চলে ব্যথার হওয়ার কারনে এইটি পরিচিত। পেটে আলসার এইটি হলো পেটের আস্তরণ বা ছোট অন্ত্রের একটি বেদনাদায়ক এক প্রকার ঘা। খুব মারাত্বক রূপ নিতে পারে এই ঘা। সময়ের মধ্যে এই রোগ নিরাময় করা উচিত।

আলসার কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

আলসার ৮ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় থাকতে পারে। আলসার রোগটি বেশির ভাগই ৭-৮ সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় করা যায়। যদি কম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এর চেয়ে কম সময় নিরাময় হয় এই রোগটি।

আলসার কি ভালো হয়?

আলসার ভালো হবে নাকি অথবা কত দিন লাগবে আলসার ভালো হতে এইটা নির্ভর করে আলসার এই ব্যাথা বা রোগ কোথায় হয়েছে তার উপর। আলসার রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়ে থাকে সাধারণত। পেটের আলসার হলে একটু কষ্ট হয় এই রোগটি ভালো হতে। বাহ্যিক আলসার হলে ক্রিম দিয়ে ভালো করে যায়। যাইহোক এরপরেও চিকিৎসা সেবা নেওয়া উচিত।

পেপটিক আলসার কি?

পেপটিক আলসার এইটি সাধারনত দুই ধরনের এইগুলি হলোঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্রহণীসংক্রান্ত আলসার। পেপেটিক আলসার হলো পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের ডুওডেনাম অংশের ক্ষতজনিত একটি রোগ। এই রোগ বেশি হয়ে থাকে ময়লা - আবর্জনার কারনে। যাইহোক জেনে নিন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এর কারণে পাকস্থলীর আলসারের প্রায় ৪% হয়ে থাকে। পেপটিক আলসার বলতে পেটের আলসার কে বুঝায়।

পেপটিক আলসারের লক্ষণ

জেনে নিন পেপটিক আলসারের লক্ষণ সম্পর্কে। আপনি হয়তো জানেন বুকজ্বলা অথবা পেট বরাবর ব্যাথা এবং নাভির ওপর থেকে বুক পর্যন্ত ব্যথার উপসর্গ লক্ষন গুলি মূলত আলসারের লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। যাইহোক জেনে নিন এই ব্যাথা গুলি মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রায় হতে পারে। কখনো কখনো এমন হয়ে যায় যার থেকে হয় শুধু যেই বুজে এইটা কেমন কষ্ট কর একটি ব্যাথা। তার জন্য এই লক্ষণ গুলি দেখা মাত্র এর ব্যাবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করুন।


এই ছাড়াও অনেক সময় বমি হয়ে থাকে অথবা বমিবমি ভাব দেখা দেয়। কালো রঙের পায়খানা হয়ে থাকে। কোন কারন ছাড়াও ওজন কমতে থাকে। বুকে প্রচুর ব্যাথা হয়ে থাকে।

কি খেলে আলসার ভালো হয়?

ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, আপেল প্রতিদিন একটি করে, ব্লুবেরি, র‌্যাস্পবেরি, স্ট্রবেরি, বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম মিষ্টি, গাজর, দই, অলিভ অয়েল, রসুন, ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি, যষ্টিমধু ইত্যাদি খেতে হয় আলসার হলে।

নাস্তা হিসেবে শুকনো খাবার খাবেন হতে পারে মুড়ি, ক্র্যাকার্স ইত্যাদি। এক কথায় শুকনা জাতীয় খাবার খেতে পারেন। প্রতিদিন কিছু তাজা ফল খাবেন। ফল হিসেবে খেতে পারেন আপেল।

আলসার হলে কি খাওয়া যাবে না?

আলসার হলে তেল জাতীয় খাবার খাওয়া একদম নিষেধ। তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার, মসলাদার খাবার, কফি ইত্যাদি খাবেন না। তেল জাতীয় খাবার খেলে অনেক ক্ষতি হতে পারে। অল্প অল্প খাবার খাবেন বার বার। এক সাথে বেশি খাবার খাওয়া যাবে না। শুধু আলসার হলে তেমন টা কিন্তু না। আমাদের উচিত সব কিছু নিয়ম মেনে খাওয়া।


ধূমপান অনেক বড় ক্ষতিকর একটি খাবার। এমনিতে আমরা সবাই জানি ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি। এরপরেও যদি আলসার হওয়ার সময় কেউ ধূপনার করে অথবা নেশা জাতীয় কিছু খান তাহলে অনেক ক্ষতি হতে পারে।

খাবার খাওয়ার পর ঘুমাবেন না। রাতে দেরি করে খাবার খাবেন না। রাত ৯ টা অথবা ১০ টা সময় দিতে খাবার খেয়ে নিবেন। নিজেকে খুশি রাখুন। টেনশন মুক্ত থাকুন তাহলে দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।

আলসারের ব্যথা কেমন লাগে?

পেটে জ্বলন্ত সংবেদনের মতো অনুভব হয় এই আলসারের ব্যাথা। কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে আলসারের ব্যাথা। খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে শুরু হয়ে থাকে এই ব্যাথা। অনেক সময় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় এই ব্যথার কারনে। রাতের বেলায় এই ব্যাথা বেশি দেখা দেয়। তাই খাবার খাওয়ার পর পর ঘুম না যাওয়া ভালো। বেশি বেশি ফল মূল খাবেন। ভিটামিন জাতীয় খাবার খাবেন।

আলসার হলে কি কি খেতে হয়?

আমরা উপরে বলেছি কি খেলে আলসার ভালো হয়। এইখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিন। আলসার হলে বেশি বেশি ফলমূল খেতে হয়, শুকনো খাবার খেতে হয় যেমন, মুড়ি এইরকম শুকনো জাতীয় খাবার।

আলসার রোগের খাবারের তালিকা

  • ফুলকপি
  • বাধাকপি
  • মুলা
  • আপেল প্রতিদিন একটি করে
  • ব্লুবেরি
  • র‌্যাস্পবেরি, স্ট্রবেরি
  • বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম মিষ্টি
  • গাজর
  • দই
  • অলিভ অয়েল
  • রসুন
  • ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি
  • যষ্টিমধু
  • শুকনো খাবার ( যেমন মুড়ি ) ইত্যাদি। 
  • নোটঃ ধূমপান, তেলজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। না হলে অনেক বিপদ হবে।

আলসার হলে কি ক্যানসার হয়?

এই প্রশ্ন টি সবার মনে মনে থাকে। যাইহোক আমরা বলব এই ধরনের আলসার ক্যানসারের কারণ নয়। যদিও অনেক সময় এটি অনেক মারাত্বক রূপ নিতে পারে। তাই বলা যায় ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে এ রোগ থেকে আপনার শরীরে ক্যানসার হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে না হলে অনেক বড় সমস্যা হবে এমনকি ক্যানসারে হতে পারে।

আলসার হলে কি ঔষধ খাব?

আলসার হলে আপনার থেকে কিছু ঔষধ খেতে হবে। এর আগে আপনার থেকে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে যদি আপনি ধূমপান করে থাকেন। আর যদি আপনি ধূমপান না করেন তাহলে ভালো কথা।


আলসার হলে ওমিপ্রাজল, লেনসো প্রাজল, এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন, পেনটো প্রাজল জাতীয় ঔষধ খেতে হবে। ( ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত না , ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে না খেলে এতে কোন বিপরীত হলে আমরা দায়ী না )। আমরা অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করি এবং সাহায্য করি। তাই আপনাদেরকে আমরা বলব এই সব ঔষধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

গবেষনায় দেখা গেছে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ আলসারের রোগীটি ভালো হয়ে যায় যদি ঠিকমতো চিকিৎসা নেওয়া হয় তবে।

আলসার হলে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ

অ্যান্টিবায়োটিক এই ধরনের ঔষধ তখনি দেওয়া হয় যখন দেখা যায় হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধম্যে অথবা এই ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থেকে আলসার হয় তখন চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে থাকে।


তার সাথে ওমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল এই ধরনের ঔষধ গুলি দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় একটি ঔষধ দেওয়া হবে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ এর সাথে।

অনেক সময় যদি দেখা যায় হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইনফেকশন করে তখন দুটি অ্যান্টিবায়োটিকের একটি কোর্স দিয়ে থাকে। এই কোর্সের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গুলি দিনে দুইবার করে এইভাবে মোট এক সপ্তাহ খেতে হবে। 

অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গুলি খাওয়ার পর যা যা হতে পারেঃ-

  • মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।
  • মাথা ঘুরানো
  • বমি বমি ভাব বা বমি করা 
  • ডায়রিয়া 
  • মুখে ধাতব স্বাদ পাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য

যাইহোক অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ হলে আরেকটি পরিক্ষা করতে হবে সেটি হলো "H. pylori" এইটি করা হবে ৪ সপ্তাহের পর অর্থাৎ কোর্স শেষ হওয়ার পর। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ডাক্তার আপনার রোগ অনুযায়ী আরো নানান রকম ঔষধ খাওয়ার কথা বলবে। আপনার থেকে ডাক্তারের নিয়ম মেনে চলতে হবে।

পিপিআই অথবা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর

এই ধরনের ঔষধ গুলি অর্থাৎ পিপিআই অথবা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ মূলত পাকস্থলীতে এসিডের উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে। যার ফলে আলসারের সমস্যা অনেক কমে যায় কারন এই ঔষধ গুলি খাওয়ার ফলে আলসারের সাথে এসিডের সংস্পর্শ কমে যায়।


পিপিআই অথবা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর এই জাতীয় ঔষধ গুলি সাধারণত ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে বলা হয়। পিপিআই-এর মধ্যে যেইগুলো রয়েছে সেইগুলি হলোঃ

  • ওমিপ্রাজল
  • ইসোমিপ্রাজল
  • র‍্যাবেপ্রাজল
  • প্যান্টোপ্রাজল
  • ল্যানসোপ্রাজল

পিপিআই বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ খেলে যা হবে

  • মাথাব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • বা কোষ্ঠকাঠিন্য 
  • বমি বমি ভাব
  • পেটে ব্যথা
  • মাথা ঘুরানো
  • শরীরে র‍্যাশ হওয়া।

এই সময় না কিছু দিন পরে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়া যাবে না। কারন এই ফলে হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে অস্টিওপোরোসিস (হাড় ক্ষয়) ও ভিটামিন বি ১২ এর অভাবজনিত রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সকল সমস্যা দেখা দিবে। 

এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার

ফ্যামোটিডিন, সিমেটিডিন এবং নিজাটিডিন এইগুলি হলো মূলত পেটের আলসারের চিকিৎসায় ব্যাবহার করা এইচ২ (H2) রিসেপ্টর ব্লকার।

অ্যালজিনেট এবং এন্টাসিড

অ্যালজিনেট এবং এন্টাসিড এই ঔষধ গুলি H2 রিসেপ্টর ব্লকার, অ্যান্টিবায়োটিক এবং পিপিআই ঔষধ গুলির পাশাপাশি খেতে দেওয়া হয়। কারন উপরের যেই ঔষধ গুলির খেতে বলা হলো এইগুলি খাওয়ার পর কাজ শুরু করতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। 

আলসার মূল থেকে দূর করতে কী করবেন?

বেশি করে হলুদ খেতে পারেন আলসার মূল থেকে দূর করতে। এর সাথে এটি রক্তনালীর কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং প্রদাহ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে । এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে এই মিশ্রণটি ২-৩ বার পান করুন। 

পেটের আলসারের কারণে কী খাওয়া উচিত নয়?

ভাজা খাবার খাবেন না। যদি আপনার পেটে আলসারের সমস্যা থাকে, তাহলে ভাজা খাবার খাবেন না , এটি সেবনের কারণে পেটে ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার সমস্যা আরও বাড়তে পারে, তাই চেষ্টা করুন আলসার হলে, তেল ব্যবহার করতে থেকে দূরে থাকতে। যতটা সম্ভব মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন, যাতে এই রোগটি বৃদ্ধি না পায়।

আলসারে হলে কি দুধ পান করা উচিত?

গরুর দুধে কিছু পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলেও পেটের আলসারে উপকার পাওয়া যায়। বেলের রস বা বেলপাত্র পিষে পানিতে গুলে পানীয় পান করলেও পেটের আলসারে উপকার পাওয়া যায়।

আমি কি আলসারে দই খেতে পারি?

দই , বাটার মিল্ক খেলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তাই যাদের আলসার আছে তাদের খাওয়া বন্ধ করা উচিত। রাতে ভাত খাওয়া বন্ধ করুন । রাতের খাবারে মসুর ডাল খাওয়ার পরিবর্তে দুপুরের খাবারে খাওয়া শুরু করুন যাতে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই মৌসুমে লাউ এবং কুমড়া সবজি বেশি করে খান, এই দুটি শাকই আলসার কমাতে সহায়ক ।

আমি কি আলসার হলে কলা খেতে পারি?

কলা ফুলের সবজি খাওয়া আলসার , বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ পেট সংক্রান্ত রোগ নিয়ন্ত্রণে উপকারী।

আলসার ব্যথা কোথায় অবস্থিত?

সবচেয়ে সাধারণ আলসারের লক্ষণ হল আপনার স্তনের হাড় এবং আপনার নাভির (নাভি) মাঝখানে আপনার পেটে একটি নিস্তেজ বা জ্বলন্ত ব্যথা । এই ব্যথা প্রায়শই খাবারের সময় ঘটতে পারে এবং আপনাকে রাতে জাগিয়ে তুলতে পারে। এটি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।

আলসার থেকে মুক্তির উপায়?

আলসার থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনার থেকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তার মধ্যে একটি হলো খাবার। খাবার ঠিকমতো না খেলে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কষ্টকর। আমরা আগেই বলছি আলসার এক প্রকার ঘা।


আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুলা, আপেল প্রতিদিন একটি করে, ব্লুবেরি, র‌্যাস্পবেরি, স্ট্রবেরি, ফুলকপি, বাধাকপি, বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম মিষ্টি, গাজর, দই, অলিভ অয়েল, রসুন, ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি, যষ্টিমধু ইত্যাদি খেতে হয়। বিশেষ করে শুকনো জাতীয় খাবার খেতে হয় আলসার হলে। এই ছাড়াও টাটকা ফল মূল খেতে হয়।

আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মেথি খাওয়া যেতে পারে। এই মেথি ঘা সারিয়ে তোলার শক্তিশালী উপাদান কারন মেথি থেকে পাওয়া ঘন ও আঠাল উপাদান আমাদের শরীরের অনেক কার্যকরী। মেথি খাওয়ার নিয়মঃ দুই কাপ পানিতে এক চা-চামচ মেথি বীজ সিদ্ধ করে খাওয়া। যদি স্বাদ বাড়াতে চান তাহলে মধু যোগ করতে পারেন। প্রতিদিন দুইবেলা করে মোট একসপ্তাহ করে খাবেন।


আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কলা খেতে পারেন এতে অনেক ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান করে যা পেটের আলসারের জন্য দায়ী ‘এইচ.ফাইলরি’ ব্যাকেটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম।

আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নারিকেল খেতে পারেন। প্রতিদিন চাইলে আপনি এক কাপ কচি নারিকেলের পানি খেতে পারেন এতে শরীরের অনেক উপকার হবে।

এই ছাড়াও উপরে তো বলা হয়েছে কি খাবেন। যাইহোক ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কোন রকম ঔষধ খাবেন না। রাতে ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নিবেন। কম কম করে খাবার খাবেন। অর্থাৎ এক সাথে সব খাবেন না। আস্তে আস্তে করে কম খাবার খাবেন।


ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই আপনি কিছু করতে যাবেন না। এতে বিপরীত হয়ে যাবে। যাইহোক আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই আমাদের বলা ঔষধ গুলি খেয়ে পেলেন তাহলে আপনার ক্ষতি হতে পারে এতে আমরা কোন প্রকার দায়ী নয়। কারন আপনার শরীরের জন্য কোন প্রকার ঔষধ লাগবে এইটা ডাক্তার ভালো জানে।

আমাদের শেষ কথা

এইখানে শেষ হলো আমাদের লেখা "আলসার কত দিনে ভালো হয়" এই আর্টিকেলটা। যাইহোক আমরা আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলে অনেক তথ্য পেয়েছেন। আলসার কি এবং করনীয় এই আর্টিকেলটা আপনার ভালো লেগে থাকলে অথবা কোন প্রকার উপকার হয়ে থাকলে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাহায্য করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে বা বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।


আলসার কি এইটা আশা করি আপনাদের জানাতে পেরেছি। এই ছাড়াও আপনাদের আরো জানানোর চেষ্টা করেছি আলসার হলে কি করণীয় ইত্যাদি সকল বিষয় সম্পর্কে। আপনার কাছে একটি অনুরুদ আলসার কত দিনে ভালো হয় এই আর্টিকেলটা সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দিন। এই ছাড়াও যদি আলসার কি এবং করনীয় এই আর্টিকেলে আমরা কোন ভুল তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিবেন এবং আমাদের কমেন্ট করে জানান।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ