পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা - আজকের আমাদের আলোচনা পরিবেশ দূষণের কারন এবং তার প্রতিকার এই রচনার সম্পর্কে। আমরা এই আর্টিকেলে দুই ভাবে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা শেয়ার করেছি। যাদের দরকার হয় এই রচনা গুলি দেখে নিতে পারেন। যারা গুগলে সার্চ করেনঃ
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 4
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 10
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 3
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২০ পয়েন্ট
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 5
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 9
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা hsc
- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা pdf
উপরের দেওয়া কীওয়ার্ড গুলি লিখে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার - পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা hsc
ভূমিকাঃ মানুষ তথা জীবজগতের বাসযোগ্য এলাকাই হল তার পরিবেশ। পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মানুষ এবং অপরাপর উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে। জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে প্রতিনিয়ত জীবন রক্ষাকারী উপকরণের আদান-প্রদান চলে। এ আদান-প্রদানের ভারসাম্যের ওপর জীবের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। পরিবেশের এ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটে। আর পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন।
পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত
পরিবেশ দূষণের সূত্রপাতঃ মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত ঘটে। আদিম যুগের পৃথিবীতে যখন থেকে আগুনের ব্যবহার শুরু হয় তখন থেকেই প্রাণ প্রদায়ী অক্সিজেনের ধ্বংস শুরু হয়। আর এই অক্সিজেন ধ্বংসের সাথে সাথে এর ধোয়া ও ভস্মকণায় পরিবেশ দূষিত হয়। সভ্যতার বিচিত্র বিকাশের প্রতিক্রিয়া পরিবেশের ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। নগরজীবনের প্রাচুর্যে যানবাহনের আধিক্য দেখা দেয় রাজপথে, সবুজ বিপ্লব ঘটাতে আসে কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে। ফলে পরিবেশ দূষণ বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে।
পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের কারণ ও প্রতিক্রিয়া
পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের কারণ ও প্রতিক্রিয়াঃ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট তথা পরিবেশ দূষণের নানাবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে-(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, (২) বনজ সম্পদের বিনষ্টি, (৩) বায়ু দূষণ, (৪) পানি দূষণ, (৫) শব্দ দূষণ এবং (৬) গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার বিরূপ প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ হুমকির সম্মুখীন।
(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে লোকালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, দরিদ্র, অশিক্ষা ও অভাব অনটন পরিবার কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
(২) বনজ সম্পদের বিনষ্টিঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। সে তুলনায় আমাদের দেশে বনভূমি অপ্রতুল। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের শতকরা ১৬ ভাগ। তদুপরি নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তনের ফলে বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্ববাসী আজ শঙ্কিত। এভাবে আর ক'বছর চলতে থাকলে দেশে বনভূমির পরিমাণ শূন্যের Desy কোঠায় এসে দাঁড়াবে, যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। মানুষ, গরু-ছাগল, হাঁস মুরগি, পশু-পাখিসহ কোন প্রাণীই বেঁচে থাকবে না, দেখা দেবে মহা বিপর্যয়, বিধ্বস্ত হবে সভ্যতা, ধ্বংস হবে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব।
(৩) বায়ু দূষণ ও প্রতিক্রিয়াঃ বাতাসে জীবের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বায়ু দূষণ বলে। ধোঁয়া, ধুলাবালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেঞ্জোপাইরিন নির্গত হয় যা হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগের কারণ। ধুলাবালি বিভিন্ন রোগের বাহন, কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সার রোগের কারণ। তা থেকে অঙ্গ বিকৃতিও হতে পারে।
(৪) পানি দূষণ ও প্রতিক্রিয়াঃ পানি দূষণ ঘটে খাল-বিলে, নদী সাগরে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর পানি দূষিত করে। কীটনাশক পানিতে মিশে, তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল ছড়িয়ে সাগরের পানি দূষিত করে। নাইট্রোজেন সারও পানি দূষণের কারণ। দূষিত পানি সংক্রামক রোগ ছড়ায়। মাছ ও ফসলের মধ্যে বিষ জমে। সে সব বিষাক্ত মাছ খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
(৫) শব্দ দূষণ ও প্রতিক্রিয়াঃ যানবাহনের শব্দ থেকে শব্দ দূষণ হয়। কলকারখানার শব্দ, গাড়ির হর্ণ, মাইকের আওয়াজ, বোমাবাজির আওয়াজ প্রভৃতি শব্দদূষণ সৃষ্টি করে যা মানুষের স্নায়ুবিক বৈকল্য, নিদ্রাহীনতা, শিরঃপীড়া, মানসিক রোগ ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
(৬) গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়াঃ বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাসের (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি) মাত্রার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রকৃতিগত এবং পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন।
গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার দরুন পৃথিবীতে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বরফগলার পরিমাণ বাড়বে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপকূলবর্তী ও নিম্নাঞ্চল বা সাগরের দ্বীপাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবী থেকে ৭৬ রকমের প্রাণী ও কয়েক হাজার রকমের গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৩২ রকমের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৬ রকমের প্রজাতির পাখির বংশ বিলুপ্তির পথে। বহু জমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। প্রতি বছর কলকারখানা ও যানবাহন থেকে ২০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে বাতাসে জমা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সুন্দর এই পৃথিবী সত্যিই একদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ভারসাম্য রক্ষার উপায়
ভারসাম্য রক্ষার উপায়ঃ পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যহানি, রোগ-শোক, অর্থ ও সম্পদের অপচয় ইত্যাদি যে সব ক্ষতি সাধিত হয় তা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এর জন্য নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। বায়ুদূষণের বেলায় কীট নিধনে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ, নিবিড় বনায়ন, রাসায়নিক পদার্থের শোধন ধোয়ার পরিশ্রুতিকরণ, বসতি ও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব রাখা ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হতে পারে। পানি দূষণ দূর করার জন্য রাসায়নিক পদার্থ ও ময়লার বিশোধন দরকার। শব্দ দূষণ দূর করতে হলে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সুনাগরিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দূ নিরোধক আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দূষণ নিরোধ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এর মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' পালন করা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপঃ
সরকার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং আগামী প্রজন্মকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করতে কতিপয় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন –
(ক) পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধঃ দেশের পরিবেশ রক্ষার জন্য বর্তমান সরকার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিগত ২০ বছরে পলিথিন শপিং ব্যাগ মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত করে তুলছিল। প্রায় অচল করে তুলছিল রাজধানীসহ শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং সারা দেশে পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে।
(খ) পরিবেশ আদালত স্থাপনঃ দেশকে অধিকতর বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে সরকার আরও যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তন্মধ্যে রয়েছে পরিবেশ আদালত। এ আদালতে পরিবেশ দূষণজনিত সকল অপরাধের দ্রুত বিচার সম্পন্ন হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ ৬টি বিভাগীয় শহরে পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় একজন করে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
(গ) পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ২০০২ঃ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ ১ এপ্রিল ২০০২ জাতীয় সংসদে গাড়ির ধোয়া, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ২০০২ উত্থাপন করেন। বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়।
(ঘ) টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধকরণঃ বায়ুদূষণসহ নানা রকম দূষণে ঢাকা এখন পৃথিবীর একটি পতিত এবং সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসেবে বিবেচ্য। তাই সরকার ১৯ মে ২০০২ ঢাকা মহানগরীতে পর্যায়ক্রমে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত থ্রি হুইলার মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে টু স্ট্রোক থ্রি হুইলারের চলাচল সীমিতকরণ করা হয়েছে। ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর লাইসেন্সও বাতিল করার মাধ্যমে রাজধানীকে টু-স্ট্রোক যানবাহনমুক্ত করা সম্পন্ন হবে। ঢাকার রাস্তাকে টু-স্ট্রোক মুক্ত করার পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়।
(ঙ) বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্রঃ পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢাকায় 'কন্টিনিউয়াস এয়ার মনিটরিং স্টেশন' (সিএএমএস) নামক বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্র " স্থাপন করা হয়েছে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা জানা যাবে।
(চ) মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধঃ পরিবেশ দূষণমুক্ত করা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২৫ বছরের বেশি পুরনো ৩৭০০ ট্রাক, ২০ বছরের বেশি পুরনো ৩৭০টি বাস-মিনিবাস এবং ১৯৯৩ সালের আগে রেজিস্ট্রেশন করা ১৪ হাজার বেবিট্যাক্সি, ৫৫০টি টেম্পো ও ৭০০ অটোভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনের কারণে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটছিল।
(ছ) পরিবেশ উপযোগী সিএনজি জ্বালানিঃ সরকার ২০০৪ সালের মধ্যে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলোকে পরিবেশ উপযোগী জ্বালানি সিএনজিতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় ইতোমধ্যে রাজধানীতে ১২টি সিএনজি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০০২ সালের মধ্যে আরো নতুন চারটি স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
(জ) অন্যান্য পদক্ষেপঃ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় জলাভূমি রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে গুলশান, বারিধারা লেক এবং আশুলিয়ার জলাভূমি রক্ষার জন্য বর্তমান সরকার সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সময়োপযোগী ব্যবস্থার মাধ্যমে পাহাড় কাটা বন্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইটের ভাটায় কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে এবং ভাটা থেকে উদগীরিত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গাসহ সারা দেশে নদী দূষণ বন্ধ করার জন্য নেয়া হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ।
উপসংহার
উপসংহারঃ পরিবেশ দূষণ পরিবেশের ভারসাম্য তথা মানব জাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তথা অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত অপরিহার্য।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট - পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা for class 10
ভূমিকাঃ বিখ্যাত পরিবেশবিজ্ঞানী পিটার ওয়ালিস্টন বলেছেন, “Environmental pollution is a great threat to the existence of living being on the earth" প্রকৃতপক্ষে বিশ্বমানবের জন্য পরিবেশ দূষণ আজ এক অস্তিত্ব ধ্বংসকারী হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ তথা পরিবেশকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার ওপরই নির্ভর করছে পৃথিবীতে মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা। কিন্তু অবিবেচক মানুষ প্রতিদিন তার স্বার্থান্ত্র তৎপরতায় পৃথিবীকে দূষিত করে তুলছে।
পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণঃ সাধারণভাবে পরিবেশ বলতে বোঝায় মানুষের চারপাশের প্রাকৃতিক ও প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল। অর্থাৎ আলো, বাতাস, পানি, মাটি, গাছপালা, নানা প্রকার অদৃশ্য গ্যাস বেষ্টিত অবস্থাই হল মানুষের প্রাকৃতিক পরিবেশ। যেসব বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান বা উপকরণের প্রয়োজনকে স্বীকার করে মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে থাকে সেগুলোর সুষম উপস্থিতির ব্যাঘাত ঘটলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারায়। এ ভারসাম্যহীনতাকেই বলা হয় পরিবেশ দূষণ। যখন পরিবেশ দূষণ ঘটে তখন মানুষের জীবনও তার স্বাভাবিক গতি হারায়। অর্থাৎ পরিবেশ ও মানুষ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
পরিবেশ দূষণের স্বরূপ
পরিবেশ দূষণের স্বরূপঃ পরিবেশ দূষণ আজ জল-স্থল-অন্তরীক্ষ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে গেলে ফুসফুস ভরে যায় বিষে, পানির সাথে পান করতে হয় আর্সেনিক বিষ, মাটি হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক মৃত্তিকাগুণ। সারা পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। মৌসুম বা ঋতুচক্র তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। মরুকরণ গ্রাস করতে বসেছে এ বিশ্বকে। রোগ-জরা জনস্বাস্থ্যকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবেশ দূষণ আজ বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে।
পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্র
পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রঃ প্রকৃতির মৌলিক কিছু উপাদান ও উপকরণকে কেন্দ্র করে দূষণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয়েছে। যেমন
বায়ু দূষণ
বায়ু দূষণঃ প্রকৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাতাস। প্রতিটি প্রাণীকে প্রতি নিঃশ্বাসে বাতাস গ্রহণ করতে হয়। অথচ নানাভাবে এ বায়ু দূষিত হচ্ছে। ফলে নিঃশ্বাসের সাথে মানুষকে নিতে হচ্ছে বিষাক্ত বাতাস। ভারী ধাতু, তেল, কয়লা ইত্যাদি জ্বালিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড সৃষ্টি বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। কল-কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করছে। ফলে নানা জটিল ও কঠিন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুস ক্যান্সার প্রভৃতি বায়ু দূষণের ফল। বায়ু দূষণ কৃষিকাজের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ু দূষণের ফলে আমাদের সামগ্রিক পরিবেশই হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বায়ু দূষণ বড় বড় শহরগুলোতে সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা ।
পানি দূষণ
পানি দূষণঃ পৃথিবীরু সুপেয় পানি সীমিত। এ মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ আজ মারাত্মক দূষণের শিকার। উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশেই গৃহকার্যের বর্জ্য পদার্থ সাগরে বা নদীতে নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। চটকল, কাপড় কল, চিনিকল, তেল উৎপাদন কারখানা, চামড়া পাকা করার কারখানা, অস্ত্র তৈরির কারখানা ইত্যাদির বর্জ্য প্রতিনিয়ত নদীর পানিকে দূষিত করছে, যা ব্যবহারের ফলে মানুষ নানা রোগের শিকার হচ্ছে। অপরদিকে সমুদ্রে পারমাণবিক পরীক্ষা পরিচালনা, তেলবাহী জাহাজ বিস্ফোরিত হয়ে পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়া, সামুদ্রিক সম্পদের অবাধ আহরণ প্রভৃতি কারণে পানি দূষণ তীব্রতর হচ্ছে। অতিমাত্রায় পানি আহরণের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিতে সংক্রামিত হচ্ছে আর্সেনিক বিষ।
তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ
তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণঃ পারমাণবিক পরীক্ষা ও দুর্ঘটনাজনিত তেজস্ক্রিয়তা বারবার বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডল, পানি ও মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে সুদূরপ্রসারী ধ্বংসাত্মক প্রভাব ডেকে এনেছে। পারমাণবিক যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে তেজস্ক্রিয় দূষণের বিপদ সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া অনেক সময় এসব অস্ত্র কারখানায় দুর্ঘটনার ফলেও পরিবেশ দূষিত হয়। এরূপ দূষণের ফলে মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনা হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তেজস্ক্রিয়তাজনিত প্রভাবে বিশাল এলাকা জুড়ে যুগ যুগ ধরে মানুষ বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মদান করবে।
শব্দ দূষণ
শব্দ দূষণঃ শব্দের তীব্রতা যখন মানুষের স্নায়বিক সহনক্ষমতাকে অতিক্রম করে তখনই শব্দ দূষণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গাড়ির হর্ন, কলকারখানার বিকট আওয়াজ, বাজি-পটকার শব্দ, রেডিও-টেলিভিশনের শব্দ, লোকজনের চিৎকার, উৎসবের মত্ততা, মাইকের আওয়াজ ইত্যাদি শব্দ দূষণের কারণ। শব্দ দূষণ শ্রবণশক্তি বিলোপ, মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে। শব্দের সহনমাত্রা ৪০ ডেসিবল হলেও ঢাকা শহরে গড় মাত্রা ৮০ ডেসিবলের কম নয়।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার
পরিবেশ দূষণের প্রতিকারঃ সামগ্রিকভাবে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও মানুষ বসবাসের অনুকূল রাখার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
১. সর্বপ্রথম পরিবেশ সম্পর্কে সর্বসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। পরিবেশ কী ও কীভাবে তা দূষিত হয় সে সম্পর্কে জনগণ এখনও ওয়াকিফহাল নয়। মানুষকে বোঝাতে হবে পরিবেশ সংরক্ষণ নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
২. প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং বৃক্ষ নিধন রোধ করতে হবে। সেই সাথে জনসংখ্যারোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা হবে, যাতে অধিক জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস না করা হয়।
৩. বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালি পণ্যে সিএফসি গ্যাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন, স্প্রে প্রভৃতিতে সিএফসির বিকল্প গ্যাস ব্যবহার করতে হবে।
৪. জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ব্যবহার করতে হবে।
৫. পরমাণু পরীক্ষা, পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে। মজুদ অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে।
উপসংহার
উপসংহারঃ পরিবেশ মানুষের জীবনকে শুধু প্রভাবিতই করে না মানুষকে বাঁচিয়েও রাখে। অথচ অপরিণামদর্শী মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্মমতা চালিয়ে তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। পরিবেশকে বিগড়ে দিয়ে মানুষ যে আত্মঘাতী কাজটি করেছে তার কুফল ভোগ করতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
আরো পড়ুনঃ
আমাদের শেষ কথা
এইখানে শেষ হলো আমাদের লেখা "পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা" এই আর্টিকেলটা। আমরা আশা করি পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা pdf এই সম্পূর্ন আর্টিকেলটা আপনাদের উপকার হয়েছে। যদি এই রচনায় কোন ভুল তথ্য দেওয়া থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান। আপনাদের কাছে একটি অনুরুদ আপনার থেকে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার এই রচনাটি ভালো লাগল আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে দিন।