যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা (pdf)

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা pdf - প্রিয় পাঠক, আপনাদের সুবিধার কারনে আমরা নিচে দুই ভাবে "যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা" এই আর্টিকেল টি পাবলিশ করেছি। আপনাদের যেই রচনা টি ভালো লাগে সেটি কপি করে আপনার ফোনের নোট পেড অথবা খাতায় লিখে শিখে নিতে পারেন। আমরা আশা করি "যুদ্ধ এবং শান্তি pdf" এই রচনাটি আপনাদের উপকার হয়েছে। যাইহোক আমরা চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য যদি যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা ( paragraph ) এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আর বন্ধুরা এই পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার প্রিয় বন্ধু অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে ( Social Media ) শেয়ার করে দিন।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা (pdf)

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা | যুদ্ধ ও শান্তি চাই | যুদ্ধ নয় শান্তি চাই কবিতা

ভূমিকাঃ মানুষ সহজাতভাবে শান্তিকামী। সে চায় শান্তি। কিন্তু এ অশান্ত বিশ্বে আজ কোথাও শান্তি নেই। মানুষের সহজাত শান্তি-প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করার অজস্র প্রয়াস কলঙ্কিত করেছে ইতিহাসের অনেক অধ্যায়কে। বিগত সাড়ে পাঁচশ বছরে ইতিহাস প্রত্যক্ষ করেছে সাড়ে চৌদ্দ হাজার যুদ্ধ। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি এবং ফিলিস্তিনী, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের ব্যাপক প্রাণহানী ও ধ্বংসলীলা আজ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। গোটা বিশ্বজুড়ে শ্লোগান উঠেছে। - যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠেছে - 

“আর যুদ্ধ নয়, নয় ।
আর নয় মায়েদের, শিশুদের কান্না
রক্ত কি, ধ্বংস কি
যুদ্ধ আর না, আর না।”

যুদ্ধের কারণ

যুদ্ধের কারণঃ বৈষম্য বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুগে যুগে মানুষ লড়াই করেছে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়। আজও মানুষ তার সহজাত বাঁচার তাগিদে সাম্রাজ্যবাদ- বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোথাও তা গণতন্ত্রের সংগ্রাম, কোথাও স্বাধীনতা সংগ্রাম নামেই চলছে। ফলে ছোট ছোট আঞ্চলিক যুদ্ধ বিদ্রোহ দিকে দিকে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বৃহৎ শক্তিগুলো অযাচিতভাবে স্বীয় স্বার্থে হস্তক্ষেপ করে চলেছে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটে চলেছে সারা বিশ্বে। আর এ কারণে গত শতাব্দীতে পৃথিবীতে দু'দুটি বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেল এবং বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে আফগানিস্তান এবং এখন ইরাকে মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনী কর্তৃক যুদ্ধ চলছে। অস্ত্র শস্ত্রের ন্যায় নানা বৈজ্ঞানিক মারণাস্ত্র আবিষ্কারও বিশ্বশান্তির পরিপন্থী। এটম বোম, হাইড্রোজেন বোম, স্কুজ ক্ষেপণাস্ত্র, টোমাইক ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে যুদ্ধের ভীতি আরো বাড়ছে।

যুদ্ধের পরিণতি ও কুফল

যুদ্ধের পরিণতি ও কুফলঃ যুদ্ধের পরিণতি ধ্বংস ও সর্বনাশ। এটি অমানবিকতা ও ধ্বংসের বীভৎস রূপ। যুদ্ধের ফলে যুগে যুগে অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অগণিত ঘরবাড়ি জ্বলেপুড়ে ছাই হয়েছে, বিকলাঙ্গ হয়েছে অসংখ্য মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোককে প্রাণ দিতে হয়েছিল। তাছাড়া যুদ্ধ জাতীয় অর্থনীতিকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়। রোগ, শোক, দুর্ভিক্ষ যুদ্ধ পরবর্তী ফল। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই যুদ্ধের আগুনে ধূলিসাৎ হয়ে যায় হাজার বছরে গড়ে উঠা সভ্যতা। একদা জার্মানি ও জাপান যে বৈষয়িক উন্নতি সাধন করেছিল, অতি লোভের ফলে দুটি বিশ্বযুদ্ধে সবকিছুই তারা হারিয়ে ফেলে। অমিত ক্ষমতার অধিকারী সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন তাকে হীনবল করে দিয়েছে। যুদ্ধে আফগানিস্তান হয়ে গেছে নিঃস্ব ।

বর্তমান যুদ্ধপরিস্থিতি

বর্তমান যুদ্ধপরিস্থিতিঃ ২০ মার্চ, ২০০৩ইং সাল ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এ দিন বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতামতকে উপেক্ষা করে, এমনকি বৃহৎ শক্তিবর্গ ফ্রান্স, জার্মানী, রাশিয়া ও চীনের আবেদনকে অগ্রাহ্য করে সর্বোপরি জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ইরাকের বিরুদ্ধে একটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবৈধ যুদ্ধ শুরু করে। ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় রিপা ইরাকের নাজাফ, নাসিরিয়া, বসরা ও বাগদাদের মত সুদৃশ্য নগরী এবং অসংখ্য জনপদ। মৃত্যুবরণ করেছে নারী-শিশুসহ লক্ষ লক্ষ নিরীহ লোক। সে এক নারকীয় উঠেছে। " দৃশ্য। এটি সভ্যতাহীন কোন বর্বর যুগ নয়, নয় কোন মধ্যযুগীয় ত্রাস-শাসকের কাল, “একুশ শতকের সূচনালগ্নে এ দৃশ্য সত্যি অকল্পনীয় ও দুঃখজনক।

বিশ্বশান্তি আন্দোলন

বিশ্বশান্তি আন্দোলনঃ যুদ্ধ কোন শান্তি দেয় না, কোন সমস্যার সমাধান দেয় না, পরিণামে ডেকে আনে ধ্বংস এবং অশান্তি। আর যুদ্ধ নয়, শান্তির অন্বেষায় ব্যবহার করা হোক সকল অস্ত্র। এটাই এ যুগের শান্তিকামী মানুষের শ্লোগান। “অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের মোকাবেলা নয় বুদ্ধি দিয়ে বুদ্ধির মোকাবেলা - এ নীতির বাস্তবায়ন একান্ত কাম্য। পৃথিবীর গণমানুষ আজ শান্তি চায়, মনেপ্রাণেই শান্তি চায়। মানুষ তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে চায়। যুদ্ধের দাবাগ্নি মনুষ্য সমাজকে শ্মশানে পরিণত করুক এটা বিবেকবান মানুষ চায় না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষী, বৈজ্ঞানিক, রাজনীতিবিদ যুদ্ধের বিপক্ষে তাদের মতামত বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করছে। কারণ যুদ্ধ লোকক্ষয় এবং সম্পদ ক্ষয় ছাড়া কিছু নয়। তাই শান্তি মানুষের জন্য শুভ এবং মঙ্গলজনক।

শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা

শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকাঃ ১৯৪৫ সালে আগস্টে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান ঘটালেও এই নতুন অস্ত্রের ভয়াবহ ক্ষমতা দেখে সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শান্তিকামী মানুষের উদ্যোগে গঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা জাতিসংঘ। তখন থেকে সারাবিশ্বে জাতিসংঘ নানা সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে বিশ্বশান্তির স্বপক্ষে কাজ করে চলেছে। মানুষের মুক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবদ কার চুক্তি সম্পাদন করছে। কিন্তু জাতিসংঘ যুদ্ধকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।

শান্তির জন্য করণীয়

শান্তির জন্য করণীয়ঃসারাবিশ্বে যদি কোটি কোটি মানুষ আজ অস্তিত্বের তাগিদে শান্তির স্বপক্ষে রাস্তায় নেমে আসে তাহলেই শুধু যুদ্ধবাজ শ্বাপদের বিষাক্ত দংশন থেকে এ বিশ্বকে রক্ষা করা যেতে পারে। তাছাড়া পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে চাই বৃহৎ শক্তিবর্গের শুভবুদ্ধি। প্রয়োজন শান্তির পক্ষে গণচেতনা, অস্ত্র উৎপাদন হ্রাস, মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা। অন্যদিকে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোকে হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করে সংযমের সাথে সমস্যার সমাধানে উদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, আধিপত্যের স্পৃহা দমন, পরধন লোভী না হওয়া এবং জাতিসংঘ সনদ মেনে চললেই যুদ্ধকে এড়ানো সম্ভব। অন্যথায় এ সুন্দর পৃথিবীকে হয়ত শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।

উপসংহার

উপসংহারঃ যুদ্ধ কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, বয়ে আনে অশান্তি। তাই আজ যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির প্রত্যাশায় লক্ষ কোটি শান্তিকামী মানুষের গগণবিদারী শ্লোগানে মুখরিত বিশ্বের তামাম রাজপথ। কোটি কোটি মানুষের এ আবেদনে সাড়া দিয়ে অশুভ শক্তির অধিকারীরা সামান্যতম মানবতার পরিচয় প্রদর্শন করবে, বন্ধ করবে যুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা - এটিই আজ সকলের একমাত্র প্রত্যাশা।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা pdf

অন্যায় আর্টিকেল পড়ুন

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা pdf | যুদ্ধ এবং শান্তি pdf | যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ছবি

ভূমিকাঃ “আমরা সবাই খুনী।”- কথাটি বলেছেন, বিশ শতকের বিখ্যাত লেখক জ্যাঁ পল সার্ত্রে। আজকের পৃথিবীতে যে রণোন্মাদনা, জিঘাংসা ও শক্তিমত্তার তাণ্ডব চলেছে, তার দিকে তাকিয়ে কথা কটি বলেছিলেন তিনি। বর্তমান শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে যে দুটি বিশ্ব মহাযুদ্ধের ঘটনায় তাণ্ডবলীলা ঘটে গেছে, তার পরোক্ষ ফল আমাদের আজও বহন করে চলতে হচ্ছে। মহাযুদ্ধের অবসান হলেও তার ফলশ্রুতি আজও চলছে এবং সেই ফলশ্রুতির নিধনযজ্ঞে আমরা কোথাও না কোথাও অংশগ্রহণ করে বেড়াচ্ছি। প্রত্যক্ষ খুনে অংশ না নিলেও পরোক্ষ খুনে তো বটেই। জ্যা পল সার্ত্রের 'আমরা সবাই খুনী' কথাটির মূল বক্তব্যটির তাৎপর্য এখানেই।

বিশ শতকের পটভূমিকায় দুটি বিশ্বযুদ্ধ

বিশ শতকের পটভূমিকায় দুটি বিশ্বযুদ্ধঃ বিশ শতকেই পৃথিবীর বুকে দুটি বিরাট বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেছে; তার ভয়াবহতা ও নৃশংসতা এই শতাব্দীর অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণদামামা বেজে উঠেছিল, তার অবসান ঘটেছিল জার্মানির পরাজয়ে; সেদিন বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো মিলিত হয়ে জাতিসংঘ ( League of Nations) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে পৃথিবীতে কোনদিন আর রক্তের ধারা প্রবাহিত হবে না। এই অঙ্গীকার যে কার্যকরী হয় নি; তার প্রমাণ কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। হিরোসিমা, নাগাসাকির বীভৎস ঘটনা সেদিন সমগ্র পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মহাশক্তিধর জাপানের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘোষিত হয়। সেদিন পৃথিবীর আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও মারণাস্ত্র সম্বলিত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো একত্রে মিলিত হয়ে পৃথিবীর বুকে পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক দ্বেষ ও হিংসা বর্জনের অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। সেই অভিপ্রামেরই ফল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (United Nations Organisation) প্রতিষ্ঠা।

বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীর স্নায়ুযুদ্ধ

বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বৃহৎ শক্তিগোষ্ঠীর স্নায়ুযুদ্ধঃ পৃথিবীতে যাতে আর কখনো যুদ্ধ না ঘটে, তার জন্য পৃথিবীর প্রধান পদ্মশক্তির মধ্যে নানারূপ আলোচনা শুরু হয়; মানুষের মুক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানাপ্রকার চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু সত্যিকারের শাস্তি কি তাঁরা চেয়েছেন? পৃথিবীর মানুষকে তাহলে তারা প্রতিনিয়ত প্ররোচনা দিয়ে চলেছেন কেন? নতুন এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে ভেতরে ভেতরে বাইরে শান্তির মুখোশ। যে হিটলারের গ্যাস চেম্বারে চার লক্ষ ইহুদীকে প্রাণ বিসর্জন করতে হয়েছিল, সে হিটলার মৃত নয় আজ কত হিটলারের বিদেহী আত্মা নিরপরাধ মানুষের নিধন যজ্ঞের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে। হিরোসিমা-নাগাসাকির পুনরাবৃত্তির প্রস্তুতি চলেছে হাইড্রোজেন, মেগাটন প্রভৃতি বোমার সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর, সুদান, ইরাক প্রভৃতি দেশে আজও অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের ক্রন্দন ধ্বনিত হয়ে উঠেছে।

সাধারণ মানুষের প্রতি ধনতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের ভ্রুকুটি

সাধারণ মানুষের প্রতি ধনতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের ভ্রুকুটিঃ পৃথিবীর অগণিত সাধারণ মানুষ আজ শান্তি চায়। মনে প্রাণেই শান্তি চায়। যুদ্ধের দাবাগ্নি শিখা যে মানুষের সমাজে ও জীবনে মহাশ্মশানের দাহনযজ্ঞ সৃষ্টি করবে, এ আজ বিবেকবান মানুষমাত্রেই আকাঙ্ক্ষিত নয়। অপরদিকে যুদ্ধের লালসায় উন্মত্ত মানবগোষ্ঠী অপরের জনসম্পত্তি লুট করে নিরীহকে শাসন ও শোষণের দ্বারা পর্যুদস্ত করে নিজেদের অহমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। ধনতন্ত্রের লালসায় উন্মত্ত হয়ে চলেছে এই শ্রেণীর মানুষ। রাজত্ত্ব ও সাম্রাজ্যবাদের অন্তিম চিন্তাধারা রচিত হয়েছে সত্যি, কিন্তু আজ চলেছে তার বিদেহী আত্মার ভ্রুকুটি কুঞ্জন রেখা। ধনতন্ত্র ও প্রচ্ছন্ন একনায়কতন্ত্র আজ সেই স্থানে এসে চেপে বসেছে- ধনতন্ত্রের ক্রমবর্ধমান লালসা পৃথিবীর বুক থেকে সমস্ত সম্পদ আহরণ করে নিতে বজ্র হয়ে উঠেছে। শশ্মানের অঙ্গারের উপর রচিত হয়েছে অর্থগুরতার অভিশাপের জৌলুসপূর্ণ সজ্জা- গণতন্ত্রের প্রচ্ছন্ন ভূমিকায় একনায়কতন্ত্রের ও ধনতন্ত্রের বিচিত্র বিলাস।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণঃ অনেক সময় অর্থনৈতিক কারণেও যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ধনতান্ত্রিকতার মাদকতা পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোকে শিল্প-বাণিজ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায় এবং শক্তিসম্পন্ন দেশসমূহকে শিল্প ও বাণিজ্যের একচেটিয়া অধিকারের জন্য লালায়িত করে তোলে। ফলে শক্তিমান দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোর তথা বিপক্ষীয় দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পদ্রব্য, কৃষি-সম্পদ প্রভৃতির উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আঘাত হানে। তখন অর্থনৈতিক অপমৃত্যুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। আবার বহিঃশত্রু যখন অন্যায়ভাবে নিজের দেশকে আক্রমণ করে তখনো আক্রান্ত দেশের মানুষের পক্ষে নিশ্চেষ্টভাবে নিরুপদ্রব শান্তিতে বসে থাকা চলে না। একদিকে পৃথিবীর নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কামনা, অন্যদিকে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিকৃত স্বপ্ন যুদ্ধের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। শক্তি দম্ভে গর্বিত বর্বরতার শক্তির এই নিদর্শন মানবসভ্যতার স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে নিরন্তর ভ্রুকুটি দেখিয়ে চলেছে। এই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান কবে হবে?

শান্তিকামীদের আন্দোলন

শান্তিকামীদের আন্দোলনঃ পৃথিবীব্যাপী শান্তির আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছেন মানবতন্ত্রী শান্তি সাধকের দল: তাঁদের প্রয়াস যে একেবারে ব্যর্থ হয়েছে, তা বলা যায় না। মহাত্মা গান্ধী ও মার্টিন লুথারের মত অহিংসায় বিশ্বাসী মহামানবকে বিশ্বশান্তির দূত দাগ হ্যামারশীল্ডকে আততায়ীর হাতে প্রাণ বিসর্জন করতে হলেও তাঁদের শান্তির প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যায় নি। আজও পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোতে তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে শান্তির প্রতীক হিসেবে শ্বেতকপোত উড়িয়ে দেওয়া হয়। মাদার তেরেসাকে নোবেল শান্তির পুরস্কার দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে— তাঁর যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। যে রক্ত একদিন যিশুর গা বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিল, আজ যেন তার অবসান হয়। আজও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী আচরণের বিরুদ্ধে সে দেশেরই নাগরিকরা রাজপথ প্রকম্পিত করে। শান্তিকামী মানুষ তাই আজও পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় নি।

জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে শান্তির বাণী

জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে শান্তির বাণীঃ যুদ্ধ নিবারণের ভূমিকায় ভারতের জোট-নিরপেক্ষ ভূমিকাটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধের বারটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ একত্রে মিলিত হয়ে জোট-নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সমবায় গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিবারই যখন বিশ্বের দরবারে রণদামামার প্রমত্ত ধ্বনি শোনা গেছে, তখনই এই জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সমবায় তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শান্তির শ্বেতকপোত উড়িয়েছে। বৃহৎ শক্তিবর্গের চাপে এঁরা কখনো নতি স্বীকার করে নি— বরং বৃহৎ শক্তিবর্গকেই নতি স্বীকার করতে হয়েছে এঁদের অভিপ্রায়ের কাছে। কিন্তু একথা সত্য, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রশক্তি শান্তির বাণী কানে তোলে না। তাদের কাছে মানবতার কথা অর্থহীন। তাই জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের ফলে বিশ্ব থেকে যুদ্ধ উন্মাদনা হারিয়ে যায় নি।

সাম্প্রতিক বিশ্ব পটভূমি

সাম্প্রতিক বিশ্ব পটভূমিঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবার আশঙ্কা না থাকলেও সারা বিশ্বে আজ চলছে যুদ্ধের দামামা। নিকট অতীতে বৃহৎ শক্তিগুলোর ইঙ্গিত ও কারসাজিতে অনেকগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্বাধিকারের আন্দোলন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনেও ঝরছে রক্ত। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের ফসল। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান প্রায়ই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। ইরাকের কুয়েত দখল ও সাদ্দাম হোসেনকে শায়েস্তা করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রশক্তি ইরাকে যে হস্তক্ষেপ করেছিল তার ফলে আজও প্রতিদিন ইরাকে রক্ত ঝরছে। আর ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের আন্দোলনও চলছে। ফকল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, থাইল্যান্ড, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে স্বাধীনতাকামী জনগণের সাথে সরকারি বাহিনীর চলছে নিত্যদিনের যুদ্ধ। তবে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া, চেচনিয়া, জর্জিয়া, সার্বিয়া, আলবেনিয়া, সিয়েরালিওন, অ্যাঙ্গোলা প্রভৃতি দেশে জাতিগত সংঘাত ও যুদ্ধ কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ইরান ও সিরিয়ার ওপর আমেরিকার রক্তচক্ষু যুদ্ধের আশঙ্কাকে জিইয়েই রেখেছে।

উপসংহার

উপসংহারঃ আজ পৃথিবীর মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। মনে প্রাণে শান্তি চায়। ভারতে অনুষ্ঠিত জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে (১৯৮৩) পৃথিবীর অন্যতম শান্তিকামী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, আমাদের বিস্তৃত হলে চলবে না যে গোটা মানবজাতির মাথার উপর যে পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের খড়গ ঝুলছে তার সঙ্গে আছে পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনার বিপদ। আমরা যুদ্ধ চাই না— চাই শান্তি। আমরা চাই শান্তির পারাবত উড়াতে।" আজ সমগ্র পৃথিবীতে শান্তির সপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে উঠেছে। স্নায়ুযুদ্ধের দিন শেষ হয়েছে। একদিন পৃথিবীর মানুষ নির্দ্বিধায় মহাশান্তির বাণী সোচ্চারে ঘোষণা করবে-- "The old paradise will became a reality.

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরো পড়ুনঃ